লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় তুফানে বাতাসের বেগ এবং গরমের তাপমাত্রা একটু বাড়লেই চলে যায় বিদ্যুৎ। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায় আবার ফিরে আসতে ! এ ছাড়া ঝোঁড়ো হাওয়া হলেতো কথাই নেই, কখনো কখনো সেটি এক থেকে দুই দিনেও স্বাভাবিক হতে পারে না।
এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রধান বাধা সুপারি গাছ। এসব গাছ এখন বিদ্যুৎ কর্মীদের কাছে আতঙ্কের নাম। কখন, কোথায় সুপারি গাছ উপড়ে পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন হয় এ নিয়েই তাঁদের দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া নারিকেল, কড়ইসহ অন্যান্য গাছের ডালা ও পাতা পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল অফিসের মাধ্যমে উপজেলাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে এখানে মোট গ্রাহক ৯৫ হাজার ৮৫৬ জন। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৯২২ ও বাণিজ্যিক গ্রাহক ৭ হাজার ৬৩৯ জন।কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৯৫ জন। রায়পুর, রাখালিয়া, হায়দরগঞ্জ ও আখনবাজারে স্থাপিত ৪টি অভিযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা চলছে। ১২টি ফিডের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে সঞ্চালন লাইনগুলো। ৩০ জন লাইনম্যান প্রতিদিন গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগের সুরাহা করতে মাঠে কাজ করেন।
চর আবাবিল ইউনিয়নের বাজারের ব্যবসায়ী মুরাদ( ৪২) বলেন, ‘কিছুদিন আগে কয়েকটি স্থানে গাছ পড়লে আমাদের গ্রামে দুই দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন সচল হয়নি। তাই আমরা দাবী জানাচ্ছি হয় লাইনের পাশ থেকে নিয়ম অনুযায়ী গাছ কাটা হোক, নয়তো গাছের কাছ থেকে সঞ্চালন লাইন ধীরে ধীরে সরিয়ে ফেলা হোক। আমরা স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সেবা পেতে চাই।’
পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের গ্রাহক লাকী বেগম (৪৫) বলেন, ‘আগে বাতাস বাড়লে ঘর-দরজা ভেঙে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকতাম। কিন্তু এখন সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া। লাইনের ওপর একবার গাছ পড়লে ৮-১০ ঘণ্টায়ও বিদ্যুৎ ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে না। কখনো কখনো এটা এক-দুই দিনেও গড়ায়। এত বেশি পরিমাণ গাছ পড়ে যে বিদ্যুতের লোকজন দিন-রাত চেষ্টা করেও লাইন চালু করতে সক্ষম হয় না।
বামনী গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক ও সুপারি বাগানের মালিক আরিফ চৌধুরী বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের লোকদের আয়ের অন্যতম অংশ আসে নারিকেল-সুপারির বাগান থেকেই। তাই এগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জীবনযাত্রার জন্য বিদ্যুৎও অপরিহার্য। এ জন্য যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনা লাইনগুলোকে আধুনিকায়ন বা ভূগর্ভস্থ লাইনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখনই ভাবা উচিত।’
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে রায়পুর উপজেলায় ১৯ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে ছোট-বড় সুপারি বাগান নেই। অন্যদিকে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের লাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুটের মধ্যে কোনো গাছ থাকতে পারবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লি বিদ্যুতের একজন লাইনম্যান বলেন, বাতাস বাড়তে দেখলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এখন গড়ে প্রতিদিন ১০-১২টি অভিযোগ সমাধান করলেও তখন তা বেড়ে ৭০-৮০ টির মতো দাঁড়ায়। কখনো কখনো দিন-রাত কাজ করে লাইন চালু করতে হয়। জোনাল অফিসে আরও ১০-১২ জন লাইনম্যান পদায়ন করলে এ দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে যেতো।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘৩টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে এ উপজেলায় আমাদের এক হাজার ৩১৮ কিলোমিটার লাইন পরিচালনা করতে হয়। প্রতিদিন এখানে ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতীয় চাহিদা সমন্বয় করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই আমাদের ২-৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম দেওয়ায় লোডশেডিং করতে হয়। তারপরও আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।