ঢাকা, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

দেশের জনসংখ্যা হবে ১৭ কোটি ৩০ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১ মে ২০২৩ ০২:০২:০০ অপরাহ্ন | এক্সক্লুসিভ

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এটি ছিল ২০২২ সালের হিসাব। কিন্তু জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) হালনাগাদ প্রক্ষেপণ করেছে এ বছর (২০২৩ সাল) বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াতে পারে ১৭ কোটি ৩০ লাখে। মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া প্রত্যাশিত গড় আয়ু হবে পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি। ইউএনএফপিএ’র স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন-২০২৩ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ অফিস। সংস্থার গুলশান অফিসে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লুখোস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সি মানুষ ২৬ শতাংশ, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১৮ শতাংশ, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সি ২৮ শতাংশ এবং ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সি ৬৮ শতাংশ এবং ৬৫ বছরে ঊর্ধ্বে জনসংখ্যা ৬ শতাংশ হতে পারে। এতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাকে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০২৩ সালের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু হতে পারে ৭২ বছর এবং নারীদের ৭৬ বছর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হয়েছে ৮০০ কোটি। এর মধ্যে ভারত চলতি বছরের মাঝামাঝিতে চীনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হওয়ার পথে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চীনের চেয়ে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ বেশি হবে। আনুমানিক হিসাব দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৪২ কোটি ৮৬ লাখে। অন্যদিকে, চীনের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৪২ কোটি ৫৭ লাখে।

প্রতিবেদনে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরে ক্রিস্টিন ব্লুখোস বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০২১ সালের হিসাবে বিবিএস’র এসভিআরএস প্রতিবেদনের চেয়ে বেশি এসেছে। এটি সময়ের কারণেও হতে পারে। যেমন ইউএনএফপিএ’র প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে জন্মের সময় প্রত্যাশিত গড় আয়ু হতে পারে পুরুষদের ৭২ এবং মহিলাদের ৭৬ বছর। যেটি ২০২১ সালের সরকারি হিসাবে পুরুষদের ৭০ দশমিক ৬ এবং মহিলাদের ৭৪ দশমিক ০১ বছর ছিল। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু কমছে। গর্ভনিরোধক প্রবণতার হার বাড়ছে। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে অনেক কিছুই করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এর সুষ্ঠু এবং মানসম্মত ব্যবস্থাপনাও জরুরি। অর্থাৎ জনগণকে দক্ষ ও শিক্ষিত করে কর্মে নিয়োজিত করতে পারলেই তারা জনসম্পদে রূপান্তরিত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি এক লাখ জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মাতৃমৃত্যু হচ্ছে ১২৩ জন, যেটি সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। তবে এটি ২০২১ সালে বিবিএস’র প্রতিবেদনের চেয়ে কম। তখন প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ছিল ১৬৮ জন। এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫১ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এশিয়া মহাদেশে বাল্যবিবাহের সংখ্যায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এর ফলে কিশোরী বয়সে গর্ভধারণের হারও অনেক বেশি। যেটি পরে তার স্বাস্থ্য এবং প্রজননে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নারীদের ৬৫ শতাংশই যৌনকর্ম বা সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে স্বামী বা পরিবার তাদের ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করে। তবে বিশ্বে এ হার ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ২৩ শতাংশ নারী অন্তরঙ্গ সঙ্গীর মাধ্যমে সহিংসতার শিকার হন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী জনসংখ্যা নীতি, তরুণদের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ব্যাপক বিনিয়োগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তারসহ নারীদের কর্মে যুক্ত করার হার বাড়াতে সরকারকে নজর দিতে হবে।