ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর ও কুমিল্লার পানিবন্দী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বপ্ন যাত্রা শুরু করেছে নড়াইলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন’। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) থেকে তারা ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।
দুই লক্ষাধিক টাকায় প্রায় দুই হাজার মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার এবং ৪০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে সংগঠনটি। এ কার্যক্রম সুষ্ঠু-সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে গত কয়েকদিন ধরে সংগঠনের সদস্যরা চাল, ডাল, তেল, চিড়া, মুড়ি, গুড়, বোতলজাত পানি, শিশু খাবার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরণের ত্রাণ সামগ্রী প্যাকেটজাত করেন।
এছাড়া ত্রাণ কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে নড়াইলের ‘মানবিক সেবা ফাউন্ডেশন’ ও ‘মানবিক জঙ্গলগ্রাম’ নামে আরো দু’টি সংগঠন। সবমিলে নড়াইল থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে তিনটি সামাজিক সংগঠন।
এদিকে, এর আগে ২০২২ সালের ২৭ জুন নড়াইল থেকে প্রায় ৪৬৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে ছিলো স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। এবার নড়াইল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর ও কুমিল্লার পানিবন্দী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করছেন তারা।
স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ জানান, ২০১৭ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসহায়, ছিন্নমূল ও ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বানভাসি ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর ও কুমিল্লার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা তাদের।
পড়ালেখার খরচ থেকে টাকা জমিয়ে সংগঠনের সদস্যরা বন্যাদুর্গতদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এছাড়া তাদের পরিবার-পরিজন ও প্রবাসী আত্মীয়-স্বজন এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। তাদের সংগঠনে সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। এদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে মির্জা গালিব সতেজ ছাড়াও রয়েছেন এসএম শাহ পরান, সোহাগ ফরাজী, মোহাম্মদ হানিফ, সৌরভ হোসেন, নিপা খাতুন, পালকি, সিকদার জাহিদ হাসান, মহিউদ্দিন, সোহেল রানা, রনি, মানবিক জঙ্গলগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক মশিউর রহমান কবির, পরিচালক (অর্থ) জান্নাতুল নাঈম, নুরুন্নবী, পরিচালক (সমন্নয়) শান্ত আলী, আমিদ আলী, সৌরভ আলী, শাহীন আলী, রাহাত আলী, অনিক আলী, মোহাম্মদ রাহুল বেগসহ অনেকে।
মানবিক জঙ্গলগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা ত্রাণ কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছি। বন্যাদুর্গত দুর্গম এলাকায় আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
নড়াইল জজকোর্টের অ্যাডভোকেট কাজী জিয়াউর রহমান বলেন, মানবিক সেবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণগুলো ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর ও কুমিল্লার পানিবন্দী মানুষের মাঝে পৌঁছে দিব।
এ ধরণের মানবিক ও সামাজিক কাজ দেখে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। এসব সংগঠনের পাশাপাশি অন্যদেরও বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা সুজা উদ্দীন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে ‘স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন’ সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবারও বন্যাদুর্গত এলাকায় তারা যে ধরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের কাজকে সাধুবাদ জানাই। অন্যান্য সংগঠনও এ কাজে আরো সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যাশা করছি।