ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭শে পৌষ ১৪৩১

বকশীগঞ্জে দুলাল খুন ॥ শিক্ষার্থীসহ শতাধিক পরিবার পলাতক

জামালপুর প্রতিনিধি ॥ | প্রকাশের সময় : সোমবার ৮ মে ২০২৩ ০৬:৪৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের আলীরপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য আবুল কাশেম দুলাল খুনের ঘটনায় শিক্ষার্থী,শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও মহিলাসহ শতাধিক পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। গ্রামের প্রায় অর্ধেক জনশূণ্য। ঘটনার ১২ দিন পরেও আলীরপাড়া গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। মামলার বাদী রেজাউল করিম সকল আসামীদের ফাসিঁ দাবি করেছেন।
জানা যায়, ২৭ এপ্রিল জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের আলীরপাড়া গ্রামে ছাগল নিয়ে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলীরপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম দুলাল খুন হয়। এ ঘটনায় নিহত আবুল কাশেম দুলালের ভাই রেজাউল করিম বাদী হয়ে নামীয় ৪২জনসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলার প্রধান আসামী বগারচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম লিচু, ২নম্বর আসামী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ উল্লাহ ও ১৫ নম্বর আসামী বগারচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোসাদ্দেকুর রহমান মাসুম প্রামানিক। চেয়ারম্যান মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ মাসুম নিহত আবুল কাশেম দুলালের স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করেছেন।  মামলার প্রধান আসামী সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম লিচুসহ ৬ আসামী বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মামলা দায়েরের পর থেকেই বগারচর ইউনিয়নের আলীরপাড়া গ্রামের অর্ধেকাংশ জনশূণ্য হয়ে। অজ্ঞাত নামা ১০/১২ জন ও মামলার ৪০ জন নামীয় আসামীসহ আলীরপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের ৩ শতাধিক সদস্য ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে বয়োবৃদ্ধ, শিশু, নারী ও শিক্ষার্থীও রয়েছে। পালিয়ে থাকা পরিবারের লোকজনের বসতবাড়ি, গবাদীপশু ও অন্যান্য মালামাল লুটতরাজ হয়েছে। বসতবাড়ি ভাংচুর হয়েছে। বাড়িঘর গুলোতে কুকুর বিড়াল ও কীটপতঙ্গ ছাড়া কেউ নেই। শিক্ষার্থীরা বড়দের সাথেই বই পুস্তক রেখে পালাতক। পালিয়ে থাকার কারণে তাদের পড়া লেখা বন্ধ রয়েছে।
বয়োবৃদ্ধ ও নারীরা জীবনের নিরাপত্তা ও হামলার আশংকায় অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে ফিরছে। আসামীর তালিকায় নাম নেই তার পরেও ভয়ে নিজ বাড়ী ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছেনা অনেক লোকজন। গর্ভবতী ও অসুস্থ্য মানুষ গুলো চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেনা।    
পালিয়ে থাকা পরিবার গুলোর মধ্যে ৯৯ভাগ পরিবার কৃষিপরিবার। নিজ বসতবাড়ি না থাকার কারণে ভুট্টা ও ইরিবোরধানসহ কোন ফসলেরই পরিচর্চচা করতে পারছেনা পলাতক কৃষিপরিবারের সদস্যরা। ভুট্টার ফসল লুটতরাজ হয়ে গেছে। পরির্চচার অভাবে ইরিবোরো ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য ফসলেরই একই অবস্থা। খাদ্যের অভাবে হাসঁ, মুরগি ও কবুতর গুলো মারা যাচ্ছে। বসতবাড়িতে লোক না থাকায় শিয়াল কুকুর আহারে পরিনত হয়েছে হাসঁ, মুরগি ও কবুতর।
আবুল কাশেম দুলাল হত্যার পর গ্রামের মানুষের জান মালের নিরাপত্তায় আলীরপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকটি স্পর্টে অতিরিক্ত পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানেও অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন আলীরপাড়া গ্রামে।
বসতাড়িতে লুটতরাজ ও ভাংচুরের বিষয়ে আবুল কাশেম দুলাল হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাবেক চেয়ারম্যান লিচুর ছেলে মোহাইমেনল ইসলাম বাদী হয়ে আবুল কাশেম দুলাল হত্যা মামলার বাদী রেজাউল করিমসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের তদন্ত চলমান।
দুলাল হত্যা মামলার বাদী রেজাউল করিম এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন ও পোস্টারিং করে মামলার সকল আসামীদের ফাসিঁ দাবি করেছেন। তিনি মানবন্ধনে সাংবাদিদের জানান, আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখনও আসামীরা আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে ক্ষতি করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। আমি কিছুই চাই না। আমার ভাই দুলাল হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
এব্যাপারে বগারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান মাসুম প্রামানিক জানান, আবুল কাশেম দুলাল হত্যাকান্ডের বিচার আমি নিজেও চাই। ন্যায় বিচারের স্বার্থে দুলালের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে আমি সব সময় আছি। কিন্তু দুলাল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোন নির্দোষ লোকযাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, পরবর্তী দাঙ্গা হাঙ্গামা ও জানমালের নিরাপত্তায় উর্ধতম কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশ ক্রমে আলীরপাড়া গ্রামে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৪ ঘন্টা অতিরিক্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করে আসছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ আলীরপাড়ায় দায়িত্ব পালন করবে। আবুল কাশেম দুলাল হত্যা মামলাটি সর্বোচ্চ শর্তকতার সাথে  তদন্ত করা হচ্ছে। দুষি কোন ব্যাক্তিই মামলা থেকে ছাড় পাবেনা। নির্দোষ কোন ব্যাক্তির বিষয়েও পুলিশ শর্তক থাকবে।
এব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  সুমন কান্তি চৌধুরী জানান, বকশীগঞ্জের আলীরপাড়া গ্রামে আবুল কাশেম দুলাল হত্যা মামলার সকল আলামত জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৬ জন আসামী। অন্যদেরও গ্রেফতার অভিযান চলমান আছে। জনগনের জানমাল রক্ষায় এবং পরবর্তী পরিস্থিতি শান্ত রাখার প্রযৈাজনে সার্বক্ষনিক পৃুলিশ টহল বিদ্যমান। অপরাধ করে কারও রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে।
এম শাহীন আল আমীন