ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে পাঁচটায় বগুড়া ডিবি পুলিশের একটি দল জেলা কোর্টের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমানকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। ডিবি অফিসে মনোয়ারা বেগমকে দেখেই হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পরে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর মারা যায়।
হাবিব এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হকের মুহুরী ছিলেন (আইনজীবীর সহকারী)। এছাড়া তিনি আইনজীবী সহকারী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার চকজোড়া গ্রামে।
তবে তার পরিবারের সদস্য ও হাবিবুরের সহকর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ কোনো মামলা বা পরোয়ানা ছাড়াই হাবিবুরকে কোর্ট চত্বর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
হাবিবুর রহমানের সহকর্মী ও বগুড়া জেলা আইনজীবীর সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার কোর্ট শেষে বিকেলে ডিবি পুলিশ কোনো পরোয়ানা ছাড়াই হাবিবুরকে কোর্ট চত্বর থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাতে হাসপাতালে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। ডিবি পুলিশ তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
হাবিবের মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন,হাবিব এর মামা এ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল হক।
উল্লেখ্য গত ৪ আগস্ট বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া তালপুকুর এলাকার একটি পার্কের পাশ থেকে একই এলাকার খুকি বেগম নামে এক বৃদ্ধা মহিলার লাশ উদ্ধার হয়। তার পা কাটা ছিলো। এই হত্যা মামলায় বগুড়ার ডিবি পুলিশ মঙ্গলবার মনোয়ারা নামে এক মহিলাকে গ্রেফতার ও তার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত বৃদ্ধার খন্ডিত পা উদ্ধার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে অনুযায়ী সন্ধ্যায় হাবিবকে ডিবি পুলিশ আটক করে মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখী করে। ডিবি অফিসে মনোয়ারা বেগমকে দেখেই হাবিব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
হাবিবের বাড়ি একই উপজেলায়। অসুস্থ্য হওয়ার পর তাকে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫মিনিটে বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৯ টায় সে মারা যায়। হাসপাতালে আরএমও ডাঃ শফিক আমিন কাজল জানান, ওই ব্যক্তিকে পুলিশ সজ্ঞাহীন অবস্থায় এনেছিলো। তার গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিলো না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পর হাসপাতালে সে পৌনে ৯ টায় মারা যায়। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্র্ত্তী জানান, হাবিব ১৩বছর আগে খুকি বেগমের সৎ ছেলে হত্যা মামলার আসামী ছিলো। খুকি বেগম হত্যা মামলাতেও সে অভিযুক্ত। ডিবি তাকে নিয়ে আসার পর শারীরিকভাবে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।