আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ভেঙে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন, সব কয়টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পূর্ণগঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
তিনি বলেন, মূলত নগরীর সবগুলো থানা ও ওয়ার্ড কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে প্রথম সভায় সবগুলো কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় কমিটি পুনর্গঠন করা হবে তা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করে তুলতে চট্টগ্রামে মাঠ পর্যায়ে সরব রয়েছেন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। চলতি বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং দলীয় ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।
জানা গেছে, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দীর্ঘ দেড়যুগের বেশী সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা ও হামলা সহ্য করেই দিন কাটাতে হতো তাদের। ফলে বছরের পর বছর নিজ নিজ এলাকায় বা ঘরে থাকতে পারতো না এমন নেতাকর্মীদের সংখ্যাও অনেক। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর সাংগঠনিকভাবে বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে বিএনপি। দলীয় জাতীয় কর্মসূচী ছাড়াও নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আওতাধীন, সব কয়টি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলো পূর্ণগঠনের ঘোষণায় থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েয় নেতাকর্মী এবং নতুন পদ প্রত্যাশীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা ও মাঠ পর্যায়ে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে।
সূত্র মতে, বিএনপির মহানগর কেন্দ্রিক যেকোনো অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সমুহের নেতাকর্মী এবং পদ প্রত্যাশীরা। সবমিলিয়ে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা নগরীর পিটস্টপ রেস্টুরেন্টের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ৫১ জন উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন ও সাবেক বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, নির্বাচন উপযোগী প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের মাধ্যমে দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং দেশে সার্বিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিএনপি সর্বদাই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পাশে থাকবে। দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনয়নে ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা এবং জনকল্যাণের লক্ষ্যে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি। পরবর্তীতে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পরবর্তীতে দুই দফা নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি পরিবর্তন হলেও থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। মো. এনামুল হক লিটন।
বায়ান্ন/এসএ