মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা থেকে ভয়ংকর এক মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা রুয়েল আহমদ (৩২) কে আটক করেছে ৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সিলেটের একটি দল। রবিবার বিকাল ৫টার সময় উপজেলার এম এ মুমীত আসুক চত্ত্বর থেকে তাকে আটক করা হয়। সে উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের নুনু মিয়ার ছেলে।
মানব পাচারকারী দালাল রুয়েলের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হওয়া জুড়ী উপজেলার আব্দুল কাইয়ুম এর ছেলে মোঃ কামরুজ্জামান এর স্ত্রী সৈয়দা জলি বেগম ৭ এপিবিএন সিলেটের অধিনায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এস এম আল মামুন এর নেতৃত্বে রবিবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ইং, বিকালে অভিযান পরিচালনা করে রুয়েল আহমদকে আটক করে জুড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় সৈয়দা জলি বেগম বাদী হয়ে জুড়ী থানায় এজাহার দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদীর স্বামী কামরুজ্জামান সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন এবং মানব পাচারকারী দালাল রুয়েল ও তার বোন সীমা আক্তার সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করে। এ সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। কামরুজ্জামানসহ আরো ২০/২৫ জন প্রবাসীকে ফ্রান্স নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্ররোচনা ও প্রলোভন দেখায়। রুয়েল বাদীর বোন- বোন জামাইয়ের সাথে কথা বলে ফোনের মাধ্যমে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি করে এবং কয়েক কিস্তিতে নগদ ও চেকের মাধ্যমে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়।
গত ০৪/১০/২২ইং তারিখ ফ্রান্স নেবার কথা বলে কামরুজ্জামানসহ ১৮ জনকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কিরগিজস্তান নিয়ে যায়। সেখানে পৌছার পর দালাল রুয়েল তার বিদেশী সহযোগীদের সহযোগিতায় সবাইকে আবদ্ধ ঘরে আটক করে রাখে। কামরুজ্জামানের নিজের খরচের জন্য কাছে থাকা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা রুয়েল জোরপূর্বক নিয়ে সে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যায়। পরে কামরুজ্জামান এর পরিবারের কাছে মুক্তিপন হিসাবে ৫ লাখ টাকা দাবী করে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করতে থাকে। এক পর্যায়ে ৪ লাখ টাকা পেয়ে ৫ মাস জিম্মি রাখার পর কামরুজ্জামানকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যায়। কিরগিজস্তান থেকে আমিরাত যাবার বিমান ভাড়াবাবদ ৫০ হাজার টাকাও নেয়।
মামলায় রুয়েলের বোন সীমা আক্তার, তার চাচাতো ভাই রকি ইসলাম (২৫) এবং তার আরেক সহযোগী মনতৈল গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম (৩২) কে আসামী করা হয়।
এদিকে, ওই রুয়েল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বাস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাদেদেউলী গ্রামের যুবক সুরঞ্জিত চন্দ্র দাস। তিনিও জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন। কামারুজ্জামানের মতো সুরঞ্জিতকেও এভাবে কিরগিজস্তানে নিয়ে গিয়ে আটক করে তার পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ মুক্তিপণ নেয় রুয়েল চক্র। আরব আমিরাত থেকে তাকে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায় রুয়েল।
সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাদেদেউলী গ্রামের সুকুমার চন্দ্র দাসের ছেলে সুরঞ্জিত চন্দ্র দাস। একপর্যায়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেন, বলে জানা যায়।