রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তার অংশগ্রহণে বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের (রাজশাহী বিভাগ) উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়াও অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের অন্তত ৭০০ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
কার্যকর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন করতে হবে- এই দাবি নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণপূর্ত ক্যাডারের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল গোফফার ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পোস্টাল ক্যাডারের কর্মকর্তা পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়কগণ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কগণ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে বক্তারা বলেন- সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদের জন্য ‘কোটা পদ্ধতি’ বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।
এছাড়া পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’ এবং পক্ষপাতদুষ্ট জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনর্গঠন করাসহ বেশ কিছু দাবি ও সুপারিশ করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী হলেও সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্যাডার সদস্যদের সাংবিধানিক অধিকার অনৈতিকভাবে হরণ করে চলছে। ১৯৭৯ সালের ১ মার্চ সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এসএসপি) আদেশ জারি করে মেধাবী সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে সকল ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের উপসচিব হিসেবে নিয়োগের বিধান করা হয়। কিন্তু উক্ত উপসচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে কোটা আরোপ করেছে প্রশাসন ক্যাডার।
১৯৯৮ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজেদের জন্য ৭৫% কোটা রেখে অন্য সকল ক্যাডারের জন্য ২৫% কোটা আরোপ করেন তারা। সম্প্রতি তারা ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদসমূহ প্রশাসন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার মাধ্যমে তারা কার্যত নিজেদের জন্য ১০০% কোটার ব্যবস্থা করেছেন। কর্মকর্তারা দাবি করেন, অনতিবিলম্বে উপসচিব পদে সকল কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন- বিভিন্ন সেক্টরে যারা বিশেষজ্ঞ, তাদেরকে দমিয়ে রেখে প্রশাসন ক্যাডার সকল মন্ত্রণালয় দখল করে রেখেছে। এতে অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যদের কাজের স্পৃহা ও অনুপ্রেরণা নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া, একটি ক্যাডারের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অন্য ক্যাডারের দ্বারা পরিচালিত হলে, সেই সেক্টর সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা না থাকায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পলিসি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। তারা বলেন, সেক্টর-সংশ্লিষ্ট ক্যাডারসমূহ যেমন সংশ্লিষ্ট সেই সেক্টরে অভিজ্ঞ ও অগাধ জ্ঞানের অধিকারী, তেমনই ক্যাডার অফিসার হিসেবে তাদের প্রশাসনিক কাঠামো, জননীতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, সংকট ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সকল বিষয়েও সমভাবে জ্ঞান, যোগ্যতা ও দক্ষতা রয়েছে। তাই প্রত্যেক ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদে এবং মন্ত্রণালয়ের পদসমূহে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানান তারা।
তারা আরও বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের উচ্চতর পদে পদ শূন্য না থাকলেও সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেয়া হয়। অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে পদ শূন্য থাকতে হবে, রিক্রুটমেন্ট রুল থাকতে হবে, দুদকের ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে, ডিপিসির সদস্যদের সন্তুষ্টি থাকতে হবে এবং ঐ ব্যাচের এডমিন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ চাহিদাকৃত গ্রেড পেয়েছেন তা নিশ্চিত হতে হবে- এরকম বিভিন্ন অজুহাতে অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয় বছরের পর বছর। এমন বৈষম্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বৈষম্য দূর করে সকল ক্যাডারের মধ্যে সমতা আনা, পদ আপগ্রেডেশন, পদোন্নতিতে সমান সুযোগ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের সংশোধন ও পুনর্বিন্যাসসহ বিভিন্ন ক্যাডারের সিনিয়র পদ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করারও সুপারিশ করেন তারা। এ ছাড়াও দক্ষ সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষাবৃত্তির ক্ষেত্রে সমতা আনা, গাড়ির ঋণ সুবিধার বৈষম্য দূর করার দাবি তুলে ধরা হয়।
পরিশেষে, কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ কর্তৃক শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে উত্থাপিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা মুনিরুল হাসান ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মোছা. নূরজাহান বেগম।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে