ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের গুদামে ব্যক্তিগত ব্যবসা,মাসে ১২ লিটার জ্বালানি ও মবিল নিচ্ছেন

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, করেসপন্ডেন্ট : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৫ অগাস্ট ২০২২ ০৪:০৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সরকারি গুদাম ব্যবহার করে গুদাম রক্ষক নিজেই ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গুদাম রক্ষক মো. মোকতার হোসেন গুদামে মাছের ওষুধ, খাদ্য রেখে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের পাশে নিজেই বাবুল ফিস হ্যাচারি নামের একটি হ্যাচারিও স্থাপন করেন। সরকারি হ্যাচারিতে মাছের পোনা কিনতে আসলে তিনি অনেক ক্রেতাদের নিজের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে পোনা বিক্রি করেন।

 

মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁকে তিনবার অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে আবার সেই বদলির আদেশ বালিত করেন কর্তৃপক্ষ।

 

মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দুজন কর্মকর্তা ও তিনজন কর্মচারী জানান, গুদাম রক্ষক মোকতার হোসেন ২০১১ সালে রায়পুর হ্যাচারিতে যোগদান করেন। এর পর থেকে তিনি প্রতিষ্ঠানের একটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করছেন। গুদাম রক্ষকের কাজ গুদামে হলেও তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে মোটরসাইকেল নিয়েছেন। এমনকি এ মোরসাইকেলের জন্য তিনি সরকার থেকে প্রতি মাসে ১২ লিটার জ্বালানি ও এক লিটার মবিল নিচ্ছেন।

 

তাঁরা আরও জানান, মোকতার হোসেনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতষ্কে থাকেন। মৎস্য অধিদপ্তরে তাঁর লোকজন থাকার হুমকি দিয়ে, তাদের সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ব্যবহার করেন। ২০১৬ সালে কেন্দ্রের একজন উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করার পর তাঁর কর্তৃত্ব আরও বেড়ে যায়। এর পরই সরকারি গুদামে নিজের ব্যক্তিগত মাল রেখে ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছর আগে তিনি হ্যাচারি স্থাপন করেন কেন্দ্রে পাশে। কেন্দ্রে আসা মাছচাষিদের ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যান তাঁর ব্যক্তিগত হ্যাচারিতে। তাদের সামনে প্রকাশ্যে তিনি এসব করলেও তাঁরা সাহস পাচ্ছেন কিছু বলতে।

 

 

গত ২০ আগষ্ট বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের হ্যাচারি ও প্রশাসনিক ভবেনর পাশে গুদাম ঘর। গুদামে সরকারি পুরনো ও নতুন মালামাল আছে। গুদাম রক্ষকের বসার ডান ও বাম পাশে দুটি ড্রাম রয়েছে। ড্রামে এসিআই লেখা। এসিআই কোম্পানীর এসব ড্রামের ভিতরে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবসার ওষুধ রয়েছে। মৎস্যচাষিরা এখানে এসে তাঁর কাছ থেকে ওষুধ কিনে নেন। ড্রামগুলো খোলার অনুরোধ করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি গুদামটি তালাবন্ধ করে দেন।

 

 

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের সামনে দক্ষিণ পাশে বাবুল ফিস হ্যাচারি। ওই দিন দুপুরে দেখা যায়, চারটি ট্যাংকিতে কাতল, রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রয়েছে। পোনা মাছের ক্রেতা পরিচয় দিলে কর্মচারী মো. মোস্তফা মিয়া ট্যাংকির পোনাগুলো দেখান। প্রতিষ্ঠানটির মালিকে কে? জানতে চাইলে, মোকতার হোসেনের নাম জানান। মোকতার এ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে চারজন মৎসচাষির কাছে মাছের পোনা বিক্রির একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। এর আগে ওই চাষিরা মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে গিয়েছেন পোনা কিনতে।

 

তবে মোকতার হোসেন বলেন, আগে গুদামে অল্প কিছু ওষুধ ও খাদ্য রেখে চাষিদের কাছে বিক্রি করতাম। গত এক বছর ধরে আর এ ব্যবসা করি না। মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের পাশের হ্যাচারিটির মালিকানা আমার না। মোটরসাইকেলটি ব্যবহার না হওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটি ভালো রাখার জন্য ব্যবহার করছি। তবে জ্বালনি খচর আর নিবেন না বলে জানান তিনি।

 

জানতে চাইলে মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বলেন, মৎস্য প্রজনন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পোনা মাছ কিনতে আসা চাষিদের নিয়ে অন্যত্র পোনা বিক্রি করা ও গুদামে ব্যক্তিগত মাল রেখে ব্যবসা করা অন্যায়। আমি কয়েক মাস আগে এখানে এসেছি। অভিযোগগুলো আমিও শুনেছি। তাঁকে মৌখিকভাবে সর্তক করা হয়েছে