ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

রায়পুরসহ জেলাজুড়ে মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সা চুরি হচ্ছে দেদার্ছে! উদ্ধার নেই একটিরও

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, করেসপন্ডেন্ট : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৮ অগাস্ট ২০২২ ০৮:১২:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

লক্ষ্মীপুর জেলায় মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক পড়েছে। এর মধ্যে সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় প্রায় ৬ মাসে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়। এক দিনেই ৪টিও চুরি হয়েছে। তবে চুরির ঘটনায় মামলার হয়রানি থেকে বাঁচতে প্রশাসনকে অবহিত করছেন না অনেক মোটরসাইল মালিক। চুরি থেকে বাদ পড়ছে না সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের মোটরসাইকেলও। বাদ যায়নি  জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মোটরসাইকেল চুরি হয়। সুযোগ বুঝে মুহুর্তের মধ্যেই মোটরসাইকেল নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় চোরেরা।

 

এদিকে, চুরি হওয়া মোটরসাইকেলসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এতেও চুরি না থামায় আতঙ্কে রয়েছে মোটরসাইকেল মালিকরা।

 

অন্যদিকে, গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় একাধিক বক্তা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে রায়পুরের রাখালিয়ায় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দুই কর্মকর্তার দুটি ও বাবুরহাটে এক ব্যক্তির একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর ফেনীর দাগনভূঞা বাজারে অভিযান চালিয়ে এনজিও কর্মকর্তাদের দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জেলা পুলিশ বিভাগ জানায়।

 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফেনী থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- লক্ষ্মীপুর সদরের দালালবাজারের খন্দকারপুর এলাকার মির্জা মুরাদ হাওলাদার এবং রায়পুরের সোনাপুরের রাখালিয়া গ্রামের মো. তুহিন। একই দিন (৬ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা চুরি হওয়া একটি মোটরসাইকেলসহ আসামি পিয়াস পাঠান ও ইয়াসিন আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেন। এ ছাড়া রামগঞ্জে মোটরসাইকেল চুরিসহ একাধিক মামলার আসামি এমরান হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

 

পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত  বছরের মার্চ মাস থেকে গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এর মধ্যে সদরের কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুর জাহের, চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আফসার উদ্দিন, চর কালকিনির সচিব প্রাণ গোবিন্দ দাস, রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফিরোজ আলম, লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, ডা. সালাহ উদ্দিন শরিফ, ইউনুছ হাওলাদার রুপম, আশরাফ হোসেন, ঠিকাদার  আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ফিল্ড অফিসার রাজিব ভৌমিক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোডের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম রনি, শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জয়, রায়পুরের জাতীয় পার্টি নেতা ইলিয়াস কবির, মনোয়ার আহমেদ প্রান্ত, ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী মো. খোকন ও পৌরসভার কর্মকর্তা আনিছুল হক ও পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. আবদুর রহিমের মোটরসাইকেল রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চোরের দল মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। তারা রাতে বাড়ির কলাপসিবল গেট কেটে ভেতরে ঢুকে মোটরসাইকেলে দেওয়া তালা ভেঙে, অনেক সময় কেটে মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। অনেক সময় দিনে বিভিন্ন মার্কেটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়।

 

 

রায়পুর উপজেলার পৃথক স্থান থেকে গত ১ সপ্তাহে  ৩টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। এ নিয়ে গত মাসে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল ও ২০টি অটোরিকশা চুরি হয়েছে।এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে দুই মোটরসাইকেল মালিক ব্যবসায়ী মো. ইমন,  সবুজ আলম ,সোহেল হাওলাদার  থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

 

হায়দরগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার এবং পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রায়পুরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোরচক্র। চার-পাঁচ মিনিট সময় পেলেই প্রশিক্ষিত চোর দল কৌশলে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা নিয়ে যাচ্ছে।

 

 এ অবস্থায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেও চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে মোটরসাইকেল মালিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে রায়পুর পৌরসভার টিঅ্যান্ডটি সড়কের বকসি বাড়ি জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় প্রবাসী মুরাদ ভূঁইয়ার বসতঘরের সামনে ডিশলাইন ব্যবসায়ী মো. ইমনের (পালসার ডাবল জিএক্স) মোটরসাইকেল চুরি হয়। একই সময় রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের সিঙ্গেরপুল নামক স্থানে মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ইজিবাইক ব্যবসায়ী সবুজ আলমের সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেল চুরি হয় এবং হায়দরগঞ্জ ভূমি অফিসের সামনে থেকে সোহেল হাওলাদার এবং  গত ১৮ এপ্রিল পৌর যুবলীগ নেতা হোসেন সর্দারের বাসা থেকে তালা ভেঙে, ছাত্রলীগ নেতা মিরাজের রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে থেকে, ১৫ জুলাই ওষুধ কোম্পানির এক প্রতিনিধির নতুন মোটরসাইকেল নিয়ে যায় চোররা।

 

মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যাওয়া মালিক সোহেল হাওলাদার বলেন, রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করলে ট্রাফিক সার্জেন্টরা হয়রানির সীমা থাকে না। কিন্তুু এত কিছুর ভিতরেও কিভাবে কাগজ পত্র ছাড়া মোটরসাইকেল তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ে যায়। অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কোনভাবেই চুরি ঠেকানো সম্ভব নয়। 

 

রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া বলেন, তিন ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে ধরতে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।