ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে আইনজীবি শাহদাতের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ,লক্ষ্মীপুর । | প্রকাশের সময় : শনিবার ৬ মে ২০২৩ ০৭:২৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

 
 লক্ষ্মীপুর পৌরসভার উত্তর মজুপুর গ্রামের এক সংখ্যালঘু  পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে হয়রানি ও জবরদখল করার অভিযোগ উঠেছে এড. শাহদাত হোসেন বাবলু নামের এক আইনজীবির বিরুদ্ধে ।
 
 দখলে বাঁধা দেওয়ায় জমির মালিক খোকন চন্দ্র দাসের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে জমি দখলকারী বলে অভিযোগ করেন। মৃত. হরিমোহন দাসের পুত্র খোকন চন্দ্র দাস লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে বসবাস করেন । পৈতৃক সূত্রে তার বাবার সম্পত্তির মালিক হয়েও এক প্রভাবশালীর জবর দখলের কবলে পড়েছেন তিনি ।
 
 দখলকারী শাহদাত হোসেন দাবি তিনি ক্রয়সূত্রে জমির মালিক  । তিনি জমিটি ক্রয় করেছেন অঞ্জলি রানী দাস স্বামী তপন কুমার দাস নামে স্থানীয় একজন মহিলার কাছ থেকে । কিন্তু অঞ্জলী রানী দাস ২০ বছর আগে ভারত চলে যায় । ভারত যাওয়ার পর পুণরায় এসে এড. শাহদাত হোসেনকে জমি রেজিস্ট্রি দিয়ে যান বলে দাবি করেন এড. শাহদাত হোসেন । অন্যদিকে শাহদাত হোসেন  বাবলুর বিরুদ্ধে জাল দলিল করারও অভিযোগ ওঠে । যেখানে পারুলের জায়গায় অঞ্জলীর ছবি দিয়ে এবং অঞ্জলীর স্বাক্ষর জাল করে  দলিল করা হয়। কম্পিউটারে  অঞ্জলীর এনআইডি কার্ড  চার্চ দেওয়া হলে সেখানে রাজশাহীর মনোয়ারা বেগম নামে এক মহিলার এনআইডি শো হয়। কিন্তু বিষয়টি এড. শাহদাত অস্বীকার করেন । তার দাবি অন্য কেউ এই জাল দলিল করেছে এখন তাকে ফাঁসিয়েছে । পরবর্তিতে জাল দলিল বাতিলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে খোকন চন্দ্র দাস । দলিল টি বাতিল হলে আবারো আরেকটি দলিল করেন শাহদাত হোসেন ।  এরপর আবারো ভুক্তভোগী খোকন চন্দ্র দাস লক্ষ্মীপুর যুগ্ম জেলা ১ম আদালতে দলিল বাতিলের বিরুদ্ধে মামলা করেন । এরিমধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হলেও সলোনামা কারো হাতে নেই । সলোনামা না আসতেই জমিটি দখলে নেন এড শাহদাত হোসেন ।  
 
 
বৃহস্পাতবার (৫ মে) জমি দখলকারী এড. শাহদাত হোসেন বাবলুর নেতৃত্বে একদল লোক এসে জমিতে সাইড ওয়ালের কাজ শুরু করেন। এসময় ভুক্তভোগী (জমির মুল মালিক) ৯৯৯ তে কল দিলে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ কওে উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হতে বলে । শুক্রবার ( ৬ মে) সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের কাগজ পত্র দেখে একটি সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগী খোকন চন্দ্র দাস কাগজ পত্র জোগাড়ের জন্য সময় চাইলেও তাকে সময় না দেওয়ার অভিযোগ আনে তিনি । কিন্তু কোন সমাধান না হলেও তার পরের দিন এড, শাহদাত হোসেন পুণরায় জমিতে কাজ শুরু করেন । অসহায় পরিবার নিরুপায় হয়ে আবারো থানায় এস আই বেলায়েত হোসেনকে  ফোন দেন ফোন না ধরায় তারা সাহস হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে । 
 
এদিকে কাজের জায়গায় গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত হলে শাহদাত হোসেন বাবলু জায়গাটি নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দাবি করেন । কিন্তুু আদালতের সলোনামা না আসা পর্যন্ত কাজ করাটা কতটুকু আইনসম্মত এই প্রশ্নের জবাবে শাহদাত হোসেন বাবলু কোন উত্তর মেলাতে পারেনি । বার বার কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন । এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী খোকন চন্দ্র দাস সরকারের এবং প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছেন । 
 
জানাযায় , দলিল বাতিলের মামলাটি যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে হওয়ায়  সেরেস্তাদার  জহির দীর্ঘদিন নকলটি আটকে রেখেছে । বৃহস্পতিবার রাতে এড.শাহদাত হোসেন বাবলুর সাথে পরামর্শ করে সংখ্যালগুর জমি দখলে সরে জমিনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ।
 
এ বিষয়ে সেরেস্তাদার জহিরের কাছ জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি আমার অফিসে কাজ করি আমি কি রাজ মিস্ত্রি নাকি আমি কাজের ওখানে থাকবো । তবে শাহদাত হোসেন বাবলু আমার বাসার পাশে থাকেন তাই ওনার সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে । 
 
৯৯৯ তে কল দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সমাধানের জন্য থানায় বসলে সেখানে উভয় পক্ষের কাগজ দেখলে । ভুক্তভোগী খোকন চন্দ্র দাস কয়েকদিনের সময় চান আদালত থেকে সলেনামা আসার জন্য । সলোনামা আসলে যিনি সঠিক থাকবেন সেই জমি দখলে যাবেন কিন্তু তাকে কোন সময় দেয়া হয়নি । বরং শনিবার সকাল থেকে আবারো শাহদাত হোসেন কাজ শুরু কজরেন ।  
 
ভুক্তভোগী , খোকন চন্দ্র দাস জানান, আমার পৈতৃক সম্পত্তি জবর দখল করছেন এড. শাহদাত হোসেন । তার দাবি যদি আইন অনুযায়ী তিনি জমি পান আমি ছেড়ে দিবো । কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থেকে , সলোনামা না আসতেই তিনি জমিটি জোর করে দখলে নিচ্ছেন । তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি ভয়ে আমার বাড়িতে আসতে পারিনা রাতে ঘুমাতে পারিনা । সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে আমার জমির ওপর এমন অত্যাচার করছে বলেও জানান তিনি । বৃহস্পতিবার প্রায় ২০/৩০ জনের এক দল লোক এসে আমার জমি দখল করেন । আমি সরকার এবং প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠ বিচার প্রার্থনা করি ।
 
অভিযুক্ত এড. শাহদাত হোসেন বলেন, আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে আমি ওয়াল করি । খোকন আমার কাজে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায় । আদালতের সলোনামা ছাড়া কাজ করাটা কতটুকু আইনসম্মত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন । তিনি বলেন, আদালতের মিমাংশা হয়ে যাওয়ার পর রায় যেই পক্ষেই থাকুকনা কেন , সলোনামা না থাকলেও কাজ করা বৈধ বলে মনে করেন তিনি ।
 
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানার এস আই বেলায়েত হোসেন বলেন, ৯৯৯ তে কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি । থানায় উভয় পক্ষকে কাগজ নিয়ে আসতে বলেছি  এবং নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হয়েছে । থানা থেকে এড. শাহদাত হোসেনকে জমিতে কোন ধরণের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান ।