ঢাকা, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১
শনিবার আসছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে বর্ণিল সাজে প্রস্তুত ময়মনসিংহ

এম ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

১১ মার্চ শনিবার ময়মনসিংহে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এদিন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠে বিশাল জনসমাবেশে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। প্রায় ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এই আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিনত হয়েছে ময়মনসিংহ। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ করার লক্ষ্য নিয়ে শেষ পর্যায়ে চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। 

শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে উচ্ছ¡াসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিভাগীয় শহরের বাইরে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়েও চলছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগদানের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে মাস ব্যাপী চলছে নানা প্রস্তুতি। স্থানীয়দের প্রত্যাশা ময়মনসিংহের চলমান উন্নয়ন ধারায় আরও নতুন কিছু সংযোজন ঘোষণা হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সফরে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবে। দলের সভানেত্রীর আগমনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই পাল্টে গেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির দৃশ্যপট। চাঙা হয়েছে দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোও।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ইতিমধ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতারা। পাশাপাশি চৌদ্দদলীয় জোটবদ্ধ দলগুলোও নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। চৌদ্দ দলের পক্ষ থেকে হয়েছে প্রস্তুতি সভা। সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের নিজ নির্বাচনী আসনে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তোরণ নির্মাণের সাথে সাথে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ও সমাবেশ সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও রয়েছে ব্যাপক তৎপড়তা। সরকারীদল এবং অন্যান্য সমমনা দল এবং ব্যাক্তির পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণার চালাচ্ছেন। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণে ছেঁয়ে গেছে ময়মনসিংহ।

দলীয় নেতাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর এই সমাবেশে দশ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে যেন বইছে অনেকটাই উৎসবের আমেজ। রং-বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে নগরীর প্রধান সড়কগুলো।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে ময়মনসিংহ। নাগরিক সংগঠনগুলো জানাচ্ছে বিভিন্ন দাবি নামা। ইতিমধ্যে জেলা নাগরিক আন্দোলন ও জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহের উন্নয়নে ২৩ দফা ও ১৮ দফা দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রধান করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি বিলি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সিটি করপোরেশনর মেয়র ইকরামুল হক টিটু নিজে এসব বিষয় তদারিক করছেন। প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সড়কগুলো অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়েছে। সড়কপথের পাশের দেয়ালগুলোতে রং এর কাজ, ফুটপাতে রং, ভাঙা সড়ক সংস্কার, পথের ধুলা বালি সরানোর কাজও চলছে জোরেশোরে। সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল সার্কিট হাউস ও আশপাশের এলাকা। সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, ময়মনসিংহবাসীর সবচেয়ে প্রিয় ও অন্তরের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত সময়ে ময়মনসিংহের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চায়নি। নেত্রী যা অনুধাবন করেছেন তাই দিয়েছেন। আমরা তাই পেয়েছি। এবারও চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। উনি যা ভালো করবেন তাই দেবেন, আমরা তাতেই খুশি।

এদিকে, ১১ মার্চকে ঘিরে নাগরিক সংগঠনগুলো তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেছে। জন উদ্যোগ নামে সংগঠন প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৮ দফা এবং নাগরিক আন্দোলন নামে সংগঠন ২৩ দফা দাবি নামা পেশ করেছে।

জন উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাড. নজরুল ইসলাম চুন্ন বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ১৮ দফা দাবি জানিয়েছেন।

নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন সার্ভিসের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ দ্রæত শুরু, বিভাগীয় নগরী স্থাপন, এসকে হাসপাতালের উন্নয়ন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ময়মনসিংহ-সিলেট ট্রেন সার্ভিস চালু ইত্যাদি বিষয়ে দাবি জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। নেতাকর্মীরা জনসভা সফল করতে মাঠে কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বাদ্য বাজনা সহকারে সমাবেশ যোগ দেবেন। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে ১১ মার্চ।

মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ময়মনসিংহ নগরী। এই সমাবেশকে ঘিরে বিভাগের নেতমীকর্মীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ময়মনসিংহে চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন। ময়মনসিংহের উন্নয়নের প্রয়োজনীয় সব কিছু উনার নখদর্পে রয়েছে। উনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ে নেবার মত কিছু নেই। উনার আশির্বাদই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।

প্রধানমন্ত্রী সফরকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ময়মনসিংহ নগরী। টহল এবং তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভুঞা বলেন, নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কয়েক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জনসভার দিন শহরজুড়ে তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সাথে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও নিয়োজিত থাকবেন।

ধারণা করা হচ্ছে বিভাগবাসীর জন্য উন্নয়নের বার্তার পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিশেষ বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

 

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ময়মনসিংহে এসেছিলেন। প্রায় ৫ বছর পর আগামী ১১ মার্চ আবারও তিনি ময়মনসিংহে আসছেন।