‘কষ্টের কথা আর কত বলে পারা যায়! প্রতি বছর দিনটি এলে চারপাশ থেকে ফোন আসে। পত্রিকা অফিসগুলো থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আর কত, কত দিন অপেক্ষা। বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, খুনিইতো চিহ্নিত হলো না। কিন্তু এখনও বিশ্বাস করি সরকার চাইলে এখনও বিচার হওয়া সম্ভব। আশা নিয়েই বেঁচে আছি। হয়তো কোনও দিন বিচার হবে।’ নিহত সাংবাদিক সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির এ কথা জানালেন।
সেই ভয়াল দিনের ১০ বছর পার হলো আজ। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার এক দশক, বিচার চাওয়া ও না পাওয়ার এক দশক। সালেহা মনির এখনও দিন গুনছেন। কেবলই ভাবছেন, চলে যাওয়ার সময় বুঝি ঘনিয়ে এলো। চলে গেলেতো বিচার দেখে যেতে পারবেন না। বিনিদ্র রাতে অশ্রুতে বালিশ ভেজাবে না কেউ আর।
সেই হতাশা নিয়ে আবার বললেন, ‘রুনির মা বিচার না দেখে চলে গেছে, এবার আমার পালা। আমিও চলে যাবো। বিচার পাবো না। ছেলের কবরও আর দেখা হবে না। কত কত বিচার এই সরকার করলো। আমার ছেলে আর ছেলের বউয়ের হত্যার বিচার পেলাম না। আমি বিশ্বাস করি সরকার একটু জোর দিলেই সম্ভব।’
বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন মাছরাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাদের রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কাল সেই মর্মান্তিক ঘটনার দশ বছর পেরোচ্ছে। সালেহা মনির তাঁর সন্তান সাগর আর পুত্রবধূ রুনির কবর জিয়ারত করতে যাননি একদিনও৷ কারণ তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে তবেই কবর জিয়ারত করবেন।
সালেহা মনির বললেন, ‘এই যে বার বার মামলা পেছানো হচ্ছে, এই বিচার আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে আমি অনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করবো, তিনি যেন আমার ছেলের হত্যার বিচারটা সুষ্ঠুভাবে করার নির্দেশ দেন। আমার নিরপরাধ ছেলে চলে গেল। মেঘ থাকতো নানির কাছে। সেই নানিও চলে গেলো। আমিও চলে যাবো একদিন। মেঘের আপনজন কমতে শুরু করেছে।’
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মেঘ তার মা-বাবাকে হারিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের সময় সেও ছিল ফ্ল্যাটটিতে। মা-বাবাকে হারানোর পর ছোট্ট মেঘের ভরসা হয়ে ওঠেন নানি নুরুণ নাহার মির্জা। নুরুণ নাহারও তার বড় মেয়েকে হারিয়ে নাতিকে অবলম্বন করে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি মারা যান তিনি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার যেতে পারলেন না।
রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, ‘আম্মা রুনি আপার হত্যার বিচারের অপেক্ষা করতে করতেই চলে গেলেন। আম্মার মতো আমরাও মৃত্যুর আগেরদিন পর্যন্ত বিচারের অপেক্ষা করবো। তিনি বলেন, তবে এখন যে প্রক্রিয়ায় বিচারকাজ চলছে তাতে আমরা কোনও আশা দেখতে পাচ্ছি না। বার বার মামলা পেছায়। আমরা একটু একটু করে হতাশ হই। এখনও একেবারে আশা ছেড়ে দেইনি। হয়তো একদিন মেঘ তার বাবা-মায়ের খুনির বিচার দেখবে।’
২০১২ সালে প্রথমে শেরেবাংলা নগর পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ও পরে ১৮ এপ্রিল র্যাব এই মামলার তদন্তভার পায়। গত ২৪ জানুয়ারি ৮৫ বারের মতো পেছায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ।