ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ’, তাই দুই যুগ পর জামিনের আবেদন শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১ জুলাই ২০২২ ০৮:১৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জোড়া খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্রের মামলা ছিল ৩৬টি। একে একে খালাস পান ৩১টি মামলায়। দুটিতে সাজা হলেও আগে কারাভোগে শেষ হয়ে যায়। আছে আর মাত্র তিনটি মামলা। কিন্তু ১২ বছর ধরে ওই তিন মামলায় একটি বারের জন্যও জামিনের আবেদন করেননি র‌্যাব ও পুলিশের তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি ‘শিবির’ ক্যাডার নামে পরিচিত।

২৪ বছর ধরে তিনি কারাগারে। হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেন। আইনজীবী ও তাঁর পারিবারিক সূত্র জানায়, বর্তমানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধসহ পরিস্থিতি ভালো থাকায় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে চান নাছির।

গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এখন পর্যন্ত দুটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল কুমিল্লায় একটি হত্যা মামলায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ রাজু নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি কুমিল্লায় একজন সাংবাদিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি। র‌্যাব জানিয়েছে, ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লার আদর্শ উপজেলার গোলাবাড়ি এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এরপর ২১ এপ্রিল মানিকগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরেকজন নিহত হন।

নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমদ আনসারী বলেন, ‘জামিন আবেদনে উল্লেখ না করলেও শুনানিতে আদালতে বলেছি, এখন বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ আছে। পরিস্থিতিও মোটামুটি। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা এই আসামিকে মুক্তি দেওয়া হোক। এত দিন একনাগাড়ে কারাগারে থাকার বিষয়টি জেনে আদালতও অবাক হয়েছেন। পরে আদেশে জামিন নামঞ্জুর করেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশটি পাওয়ার পর আবার আপিল করে জামিন চাওয়া হবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার ফটিকছড়ি থানার একটি হত্যা মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নাছিরের জামিন আবেদন করা হয়। এ সময় তিনি হাজির ছিলেন। সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এর আগে গত ২৩ জুন ফটিকছড়ির আরেক মামলায় তাঁর জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর হয়।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি মো. আইয়ুব খান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করে আদালতকে বলা হয়, দুর্র্ধষ এই সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এলে আবার অপরাধে জড়াতে পারেন। পরে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন। আইয়ুব খান আরও বলেন, তাঁরা এত দিন কোনো জামিনের আবেদন করেননি। এখন বন্দুকযুদ্ধ বন্ধসহ পরিস্থিতি ভালো থাকায় বেরিয়ে আসতে চান বলে জানান তাঁর আইনজীবী।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কারাগারে রয়েছেন নাছির। ৩১টি মামলায় খালাস পান। দুটি মামলায় সাজা হলেও আগেই কারাভোগে তা নতুন করে ভোগ করতে হয়নি। তিনি কারাগারে হাজতি হিসেবে রয়েছেন। বর্তমানে ফটিকছড়ির তিনটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।

সবশেষ ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রায় হয়। এতে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা হয়। এর আগে ২০০৮ সালে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় খালাস পান নাছির।

১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর জমিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির। 

২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরির বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে। এভাবে ৩১টি মামলায় খালাস পান নাছির। তাঁর আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে নাছিরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই খালাস পেয়েছেন তিনি। নাছির কারাগার থেকে বের হতে চান বলে জানান তাঁর ছোট ভাই জিয়াউদ্দিনও। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের জীবন–যৌবন সব কারাগারে কেটে গেছে। আর কত দিন বন্দী থাকবেন। তাই জামিনের চেষ্টা করেছি। এখন পরিস্থিতি ভালো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভালোভাবে জীবন যাপন করবেন তাঁর ভাই।