চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে তিনদিন ধরে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খোঁজ এখনও মেলেনি। বড় মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ও এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ ভিসার জন্য ভারতীয় দুতাবাসে আবেদন জানাবেন তারা।
ভারতীয় পুলিশের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬ মে সকালের দিকে এমপি আনারের অবস্থান ছিল বিহারের মোজাফ্ফরাবাদ। সেখান থেকে পিএস রউফ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ফোনে কল করা হয়। তবে ওই ফোন কল প্রকৃত পক্ষে এমপি আনার করেছিলেন কিনা তা নিয়ে নতুন করে ধ্রুম জালের সৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালে পিএস আব্দুল রউফ বলেছেন যারা ভারতে গেছেন তাদের সঙ্গে নতুন করে কোনো যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভারতীয় কতৃপক্ষকে বিষয় অবহিত করা হয়েছে। আজ পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন। ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ সর্বক্ষণ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করছেন। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজনের মাঝে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কালীগঞ্জ সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় রোড সংলগ্ন এমপির বাস ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নেতার নিখোঁজের সংবাদ শোনার পর দলীয় নেতাকর্মীরা দুপুর থেকে তার বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। সবার মাঝেই হতাশা ও চিন্তার আভাস লক্ষ্য করা গেছে। তার পরিবারের কেউই কালীগঞ্জের বাসায় নেই। পরিবারের সবাই ঢাকায় রয়েছেন।
ভারত থেকে এমপির ভাতিজা সাইমন বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, চাচার সন্ধানে শনিবার ভারতে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাচার (এমপি আনার) কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সহায়তায় তার অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বলেন, গত ১১ মে শনিবার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারত যান এমপি আনার। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধাননগর এলাকায় বন্ধু গোপালের বাড়িতে ওঠেন।
তিনি আরও বলেন, ১৩ ও ১৪ মে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় সংসদ সদস্যের। তার পরদিন থেকে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
কালীগঞ্জের পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, এমপি ভারত যাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমিও তার সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি। নিখোঁজের সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন, তার সাথে কী ঘটেছে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। তবে পরিবারের লোকজন খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ভারতে গেছেন।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল-আহসান বলেন, এমপি আনার নিখোঁজ হবার সংবাদ জানতে পারে পরিবার থেকে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। তিনি বেনাপোল গেদে বর্ডার হয়ে ভারতে যান। সেখানে যাবার পর হঠাৎ করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এমপি যে বন্ধুর বাসায় উঠেছিলেন তিনিও সেখানে একটা মিসিং ডায়েরি করেছে। যেহেতু ঘটনা ভিন্ন রাষ্ট্রের তাই ঘটনাটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঢাকার টিম এটা নিয়ে কাজ করছেন। ভারতের পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খুবই আন্তরিকভাবে দেখছেন।
প্রসঙ্গত-১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান আনার। ১৬ মে দিল্লি যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ হন তিনি। সেই থেকে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন এমপির পরিবারের সদস্যরা। টানা ৩ বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এক দফায় কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ১২ মে দর্শনা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। সে সময় তিনি সাদা শার্ট পরিহিত ছিলেন। কাঁধে ছিল একটি ব্যাগ।