ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

গ্রামীণ সাংবাদিকতায় বাশারের ৪৭ বছরের পথ-চলা....

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,মুরাদনগর : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২ মে ২০২৩ ১০:০৮:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 বর্তমানে এখনো কালের কন্ঠ ও দৈনিক কুমিল্লার কাগজে সাংবাদিকতা করছেন । গ্রামীণ মানুষের গান গেয়ে যাওয়া এমনি একজন মানুষ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এ বি এম আতিকুর রহমান বাশার। তার পিতা ভূষণা গ্রামের (অব.) সুবেদার প্রয়াত আলী আকবর ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী সংগঠক। তিনি বিশ্বাস করেন- পৃথিবীর কল্যাণকামী সব পেশা মহৎ হলেও সাংবাদিকতা পেশা সবার ঊর্ধ্বে। এটাকে পেশা বলা চলে না; মানবসেবা বলাই শ্রেয়। এই সেবায় সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা মূল হাতিয়ার। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নির্যাতিত-শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। সৎ সাংবাদিকতা সমাজকে কলুষমুক্ত করে আর সভ্যতাকে করে আলোকিত।
৪৭ বছরের পথ-চলা: এমন আদর্শকে ধারণ করে প্রায় গত ৪৭ বছর ধরে মফস্বলে সাংবাদিকতা করছেন সাংবাদিক বাশার। কুমিল্লার সমস্যা-সম্ভাবনা ও গণমানুষের কথাগুলোকে অবিরাম বলে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে তার অবিরাম পদচারণা। তিনি একাধারে সাংবাদিক, কলামিষ্ট, রাজনীতিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক।
শিক্ষা জীবন: ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা শহরের হোচ্ছা মিয়া হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া করি । কুমিল্লা শহর ও দেবীদ্বারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করি। শিক্ষা জীবনে ছোটনা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক, দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারী কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৮৬ সালে বিএ বিএ পাস করি।

প্রথম পত্রিকা: ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা শহরের হোচ্ছা মিয়া হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় ন্যাপের মূখপত্র সাপ্তাহিক ” নতুন বাংলা “ প্রত্রিকা দিয়ে আমার সাংবাদিকতা ও শিক্ষাজীবন শুরু। সাপ্তাহিক ”নতুন বাংলায় ” তার লেখা ‘কুমিল্লার দুঃখ গোমতী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
স্বার্থক প্রতিবেদন: ১৯৭৬ সালে সাপ্তাহিক ” নতুন বাংলা “ প্রত্রিকায় ‘কুমিল্লার দুঃখ গোমতী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন এ প্রতিবেদনটি নিয়ে ১৯৭৯ সালের সংসদে ন্যাপ প্রধান তখনকার এমপি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ তুমুল আলোচনা করেন যারই ফলশ্রুতিতে আজকের গোমতীর বেরী বাঁধ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ পর্যন্ত কাজ করেছেন:  দৈনিক বাংলার বানী, সংবাদ, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলোসহ অসংখ্য জাতীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ম্যাগাজিন, স্মণিকায় কাজ করেছেন ।
 মফস্বল সাংবাদিকদের উপেক্ষা : মফস্বল সাংবাদিকদের উপেক্ষা করে কোনো সংবাদপত্রই সফল অবস্থানে পৌঁছতে পারে না। মফস্বলের সাংবাদিকরা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষের লাঞ্ছনা, বঞ্চনা ও অভাব অভিযোগের খবর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে পত্রিকা অফিসে পাঠান। বলা যায়, গণমানুষের সঙ্গে মিশে একজন ভুক্তভোগীর হাঁড়ির ভেতরের খবর পর্যন্ত বের করে নিয়ে আসেন মফস্বলের সাংবাদিকরা।
জন্ম ও পরিচয়: আদি নিবাস কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভূষনা গ্রামে হলেও বাবার সরকারী চাকুরীর কারনে ১৯৫৯ সালে কুমিল্লর মনোহরপুর মুন্সেফ বাড়ীতে তার জন্ম।তবে সার্টিফিকেট অনুযাযি জন্ম তারিখ ১ অক্টোবর ১৯৬৩ঈসায়ী ।
বৈবাহিক জীবন:  স্ত্রী হুর বানু আক্তার পলি একজন সফল নারী উদ্যেক্তা পাশাপশি সাংবাদিকও। এক ছেলে-দুই মেয়ের মধ্যে প্রথম মেয়ে তাসকিয়া রহমান প্রতিভা অনার্স শেষ করে কুমিল্লা সিসিএন বিশ^বিদ্যালয় কলেজে এলএলবি অনার্সে পড়ছেন। আরেক মেয়ে আয়েশা রহমান প্রজ্ঞা দেবীদ্বার মফিজ উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে এবং ছেলে ওয়াফি রহমান ইউসুফ দেবীদ্বার এডভান্স ন্যাশনাল কিন্ডার গার্ডেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন ।
পেশাগত সহযোগীগণ: তিনি দেবিদ্ধার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রথম আলেঅসহ অন্যান্য পত্রিকায় দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত কাজে চলার পথে সংবাদ সহযোগী হিসাবে সঙ্গ লাভ করেন দাউদকান্দি উপজেলার হাবিবুর রহমান হাবিব। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা করছেন। হোমনা উপজেলা থেকে এটিএম মোর্শেদুল ইসলাম শাজু। তিনি ১৯৯০ সালে থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত। মুরাদনগর উপজেলার শাহ আলম জাহাঙ্গীর। তিনি ১৯৮৩ সালে সংবাদপত্রের সাথে মিতালী করেন। কাজ করছেন একাধিক জাতীয় দৈনিকে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা থেকে সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু। বুড়িচং উপজেলার প্রবীন সাংবাদিক মোসলেহ উদ্দিন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার এম এ কুদ্দুস। চান্দিনা উপজেলার রিপন আহমেদ ভূঁইয়া। মেঘনা উপজেলার মাহমুদ বিপ্লব সিকদার। তিতাস উপজেলার নাজমুল করিম ফারুক। দাউদকান্দি উপজেলার হাবিবুর রহমান হাবিব। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতা করছেন। হোমনা উপজেলা থেকে এটিএম মোর্শেদুল ইসলাম শাজু। তিনি ১৯৯০ সালে থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত। তিনি দৈনিক আমাদের কুমিল্লার হোমনা প্রতিনিধি।

হলুদ সাংবাদিকতার অবসান হোক: বাশার বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা। এটাকে কেউ কেউ আবার নেশা হিসেবে মানতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এটাও ঠিক যে সঠিক প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্বের অভাব, অধিক টাকার লোভ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তি বাড়ছে। অনেক সময় সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে সাংঘাতিক, হলুদ সাংবাদিক, চাঁদাবাজ সাংবাদিক, সিন্ডিকেট সাংবাদিক, বিজ্ঞাপন সাংবাদিক, রাজনৈতিক সাংবাদিক, গলাবাজ সাংবাদিক, এমনি এমনি সাংবাদিক, ক্রেডিট পরিবর্তন সাংবাদিক, দালাল সাংবাদিক ইত্যাদি অসুন্দর অভিধায় অভিহিত করা হয়। এর অবসান হওয়া জরুরি।
মফস্বলেই থেকে গেলেন: তিনি দৈনিক প্রথম আলো থেকে বেশ কয়েকবার হেড অফিসে কাজ করার অফার পেছেন। কিন্ত দেবিদ্ধারের মায়া তাকে সেখানে যেতে দেয় নি। মফস্বল সাংবাদিকরা একে তো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত, তার ওপর শহরে সাংবাদিকদের তুলনায় তাদের জীবনের ঝুঁকিটাও অনেক বেশি। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার অপরাধে দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে লাঞ্ছিতও হয়েছি।অসহায় মানুষের পক্ষে সংবাদ লিখতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। তবে ঠান্ডা মাথায় আঘাতকারীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন মারপিট করে লাভ নেই। সত্যকে ধামাচাপা দেয়া যায় না। তার লিখনির ওপর অনেক অসহায় পরিবার আইনি সহায়তাসহ সঠিক বিচার পেয়েছেন।

প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠা: তিনি বুঝতে পারেন সাংবাদিকদের মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্যের তোন বিকল্প নেই। তাই ১৯৮০ সালে দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং টানা দীর্ঘ ৩৬ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ২০১৬ সালে ওই পদ থেকে সড়ে দাড়ান। বর্তমানে এ প্রেসক্লাবের উপদেষ্টার পদে থেকে দেখভাল করছেন। সব সময় অসহায় ও অসুস্থ সাংবাদিকসহ সাধারন সুবিদা বঞ্চিত মানুষদের সেবা ও সহায়তা করে যাচ্ছেন বাশার।প্রেস কলাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। কর্তমানে দেবিদ্ধারে এবং দেবিদ্ধারে বাঢ়ি অথচ জেলা শহর ও রাজধানীতে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পদে ডারা সাংবাদিকতা করছেনতাদের প্রায় সবাই তার অঅদর্শে সাংবাদিকতা পেশায় সেছেন এবং সম্মানের সাথে নিজ নিজ যায়গায় অবস্থান করছেন। এটিতার জন্য একটি গৌরবের বিষয়।
উপসংহার: ২০০১ সালে ৪ এপ্রিল পরলোক গমন করেন তার বাবা ও মা জাহানারা বেগমকে ১৯৯৩ সালের ১১ আগষ্ট হারান সাংবাদিক বাশার। চার ভাই- তিন বোনদের মধ্যে সাংবাদিক বাশার তৃতীয়।সাংবাদিকতা মহান পেশা। এটাকে কেউ কেউ আবার নেশা হিসেবে মানতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে এটাও ঠিক যে সঠিক প্রশিক্ষণ, পেশাদারিত্বের অভাব, অধিক টাকার লোভ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তি বাড়ছে। অনেক সময় সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে সাংঘাতিক, হলুদ সাংবাদিক, চাঁদাবাজ সাংবাদিক, সিন্ডিকেট সাংবাদিক, বিজ্ঞাপন সাংবাদিক, রাজনৈতিক সাংবাদিক, গলাবাজ সাংবাদিক, এমনি এমনি সাংবাদিক, ক্রেডিট পরিবর্তন সাংবাদিক, দালাল সাংবাদিক ইত্যাদি অসুন্দর অভিধায় অভিহিত করা হয়। এর অবসান হওয়া জরুরি।তিনি তাদের মনে-প্রাণে ঘৃনা করেন।মফস্বল সাংবাদিকদের সাংবাদিকতার বুনিয়াদী প্রশিক্ষণসহ বেশি বেশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করা। বাশার বলেন, স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় সুন্দর আগামীর পথে। অজানাকে জানার কৌতূহল, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, সামাজিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি মানুষকে অলঙ্কিত করে। আর পেশাদারিত্বের প্রশ্নে আমি অবিচল।
লেখক:মমিনুল ইসলাম মোল্লা,কলামিস্ট,সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক,কুমিল্লা -০১৭১১৭১৩২৫৭