পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ এবং ইউনিট ৪) নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এ প্রস্তাব করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ এবং ইউনিট ৪) রাশিয়া সরকারের সহায়তায় নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। নতুন দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় রোসাটমের মহাপরিচালক নতুন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করতে কারিগরি সমীক্ষা দ্রুততম সময়ে শুরুর প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এরই মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিটের (১২০০ x ২= ২৪০০ মেগাওয়াট) নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শুরু হবে। ইউনিট-১ এবং ইউনিট-২ থেকে ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
রোসাটম মহাপরিচালক বলেন, নতুন ইউনিট-৩ এবং ইউনিট ৪-এর নির্মাণকাজ প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ এবং কারিগরি ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিকতর লাভজনক এবং যুক্তিযুক্ত, যা আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচিত।
প্রধানমন্ত্রী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নিতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেন।
এসময় রোসাটমের ডিজি প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়া সরকারের পক্ষে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নিতে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা যথাসময়ে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়া সরকার আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি সই করেছে।
রোসাটমের মহাপরিচালক বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার প্রায় আড়াই হাজার জনশক্তি কাজ করছে এবং তারা এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোসাটম মহাপরিচালককে বাংলাদেশি এসব দক্ষ মানবসম্পদকে অন্য পারমাণবিক প্রকল্পে কাজে লাগাতে বলেন। রোসাটম মহাপরিচালকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনকে অভিনন্দন জানান।
রোসাটম মহাপরিচালকও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দেন।
সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন প্রমুখ।