সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের কাছে ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছিলেন মখলিছুর রহমান দৌলা। ঘটনাটি কয়েকবছর আগের। দৌলা ছিলেন নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। স্থানীয় রাজনীতিক। শক্তিশালী সালিশান। অন্যায়ের প্রতিবাদি। দৌলার মৃত্যুর পর স্থানীয়রা বিষয়টিকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না। সেসময় স্থানীয়দের মুখে মুখে রটেছিল দৌলাকে পরিকল্পিতভাবে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই কাজের নেপথ্যে রয়েছে মাফিয়া চক্র। এই মাফিয়া চক্র চোরকারবারিসহ নানান অপরাধ কর্মকান্ডে বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছিল চেয়ারম্যান দৌলার কারণে। কয়েক বছর কেটে গেছে। দৌলা চেয়ারম্যানের বিষয়টি স্থানীয়রা ভুলে গেছেন। গত বছর ২ বছর ধরে মাফিয়ারা ভিন্ন পথ বেছে নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। চোরাকারবারিরা উল্টো সাধারণ মানুষকে চোরকারবারি সাজানোর চেষ্টা করেছে। এতেও ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা পরিষ্কারভাবে রহস্যজনক। স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ রাত ১০ টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের জাফলং ভ্যালী বোর্ডিং স্কুল ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলীর বাড়ির সামনে ট্রাক চাপার ঘটনা ঘটে। এই ট্রাক চাপা ঘটনায় প্রাণ হারান এম লিয়াকত আলীর পুত্রসহ ছাত্রলীগের তিন কর্মী। এরা হলেন ফয়সল রেজা (১৯) শিহাব (২২) ও পাবেল ( ১৯)।
ট্রাক চাপার ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেউই সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, লিয়াকত আলীর মেজো পুত্র ফয়সল রেজা নিজেদের বাড়ির সামনে তামাবিল সড়কের পাশে মোটর সাইকেল পার্ক করে সহকর্মীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। একটু দূরত্ব বজায় রেখে দুইটি মোটার সাইকেল পার্ক করাছিল। অপেক্ষায় ছিলেন আরেক বন্ধুর। ঠিক ওই সময় একটি মিনি ট্রাক প্রথমে একটি মোটর সাইকেলের উপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়। পরমূহূর্তে অন্য মোটার সাইকেলের উপর দিয়ে মিনি ট্রাকটি উঠিয়ে দেয়া হয়। এভাবে মোটর সাইকেলের উপর ট্রাক উঠিয়ে দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত বলে জানান স্থানীয়রা। নিখুঁতভাবে মোটর সাইকেলের উপর ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করার ঘটনা প্রথসবার ঘটেছে জৈন্তাপুরে-এমন দাবি এখন সেখানকার সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে লিয়াকত পরিবার অনেক আগে থেকে সোচ্চার। বিশেষ করে মাদক চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে নজরদারি করত এই পরিবার। ফলে লিয়াকত পরিবারকে বারবার হুমকির সম্মুখিন হতে হয়েছে। লিয়াকতের এক পুত্রকে দুই দফায় চোরকারবারির পণ্য দিয়ে ফাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ ট্রাক চাপায় নিহত হলো এক পুত্র।
স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর সীমান্ত হয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গরু, মহিষ, চিনি, মাদকসহ নানান ধরণের পন্য। রাত একটু গভীর হলে তামাবিল থেকে হরিপুর পর্যন্ত রাস্তাটি চোরকারবারিদের দখলে চলে যায়। চোরাই পণ্য বহনকারী গাড়িগুলো রাতের বেলায় গাড়ি চালায় অনিয়ন্ত্রিভাবে। কেউ সামণে পড়লে অনেকটা ইচ্ছে করে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এভাবে রাতের বেলা ঘটে চাপা বা ধাক্কা দেয়ার ঘটনা। এইসব ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয় পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় পুলিশ ওই চোরকারবারিকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। কেউ প্রতিবাদ করলে নানান ধরণের হয়রানীর শিকার হতে হয়।
স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতা জানান, এম লিয়াকত আলীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারি মাফিয়াদের রোষাণলের মধ্যে আছে। কারণ লিয়াকত পরিবার কোনোভাবেই মাদক চোরকারবারি সহ্য করতে পারছিলেন না। যার জন্যে মাফিয়াদের পথের কাটায় পরিণত হয় লিয়াকত পরিবার। পারিপাশির্^ক অবস্থায় মনে হচ্ছে এম লিয়াকত আলীও শঙ্কামুক্ত নন। তাই তাঁকেব সতর্কতা অবলম্বন করে চলাফেরা করতে হবে বলে জানান ওই সাংবাদিক নেতা।