মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগরে সাড়ে ২১ লাখ টাকার ভারতীয় চিনি ও নিষিদ্ধ নাসির উদ্দিন বিড়ি আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ০৭ মার্চ ২০২৪ইং, বেলা ২টার সময় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় অভিযান চালানো সময় অবৈধভাবে আসা চিনি আটক করা হয়ে।
জানা যায়, কমলগঞ্জে চোরাইপথে আসা ২৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করে গোডাউন সিলগালা করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর অভিযানে অবৈধভাবে আমদানি করা ৫০ কেজির ২৯০ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করলেও পাচারে ব্যবহৃত দুটি ট্রাক আটক করা যায়নি। এ সময় চিনির গোডাউন সিলগালা করা হয়।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকনজী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ভারতীয় একটি কোম্পানির ২৯০ বস্তা মোট ১৪ হাজার ৫০০ কেজি চিনি জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, চিনি পাচারকারী এই চক্রের সদস্যরা মিলে দীর্ঘ দিন ধরে ভারত থেকে চোরাই পথে কম দামে ভারতীয় চিনি এনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছিল। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি চক্র ভারত থেকে চোরাই পথে কম দামে চিনি নিয়ে আসে। ওই চিনি দেশীয় কোম্পানির চিনির বস্তায় ভর্তি করে চক্রটি। পরে তা দেশীয় কোম্পানির চিনি হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করে।
অভিযানের সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে চিনি গোডাউনে রেখে বাকি চিনি ভর্তি দুটি ট্রাক মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়।
এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে মিলছে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনি। এতে চোরাকারবারীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। ঠকছেন ভোক্তারা। সীমান্ত এলাকা থেকে প্রাই ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি চিনি আসার কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কুলাউড়ার ফুলতলা, চাতলাপুরসহ সীমান্তের কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রতিদিন আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। সাধারণত ভোর রাতে অবৈধ চিনি আনা হয়। শমশেরনগরের স্থানীয় চোরাকাবারীসহ কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধ চিনি ব্যবসার সাথে সংপৃক্ত। সীমান্ত অতিক্রম করেই তারা ভারতীয় বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় বস্তা দিয়ে চিনি পরিবহন করে। ফলে প্রশাসন ইচ্ছে করলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। সীমান্ত এলাকার নিরীহ সাধারণ লোকদের দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি প্রদান করে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শমশেরনগর বাজারের দু’জন ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় চিনি কিনে বিক্রি করছি। শমশেরনগর ভেতর বাজারের এক ব্যবসায়ীর দোকান থেকে তুলনামূলক কম দামে ভারতীয় চিনি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি যদি একবার অকশনের মাল ক্রয় করেন পরে পুরো মাস অবৈধভাবে আসা চিনি সরবরাহ করেন।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে এই বিষয়টি পুলিশ দেখলে ভালো হয়। সেখানে মামলার বিষয়ও জড়িত রয়েছে। তারপরও অভিযানে আসলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুয়ান, অভিযানকালে ঘটনাস্থলে কোনো ট্রাক পাওয়া যায়নি। তবে ২৯০ বস্তা চিনি জব্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে এসআই অরূপ সরকার বলেন, একদল পুলিশ রাজনগরের টেংরা বাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালান। এ সময় একজন আসামিকে সাদা রংয়ের করোলা প্রাইভেট কারসহ আটক করা হয়েছে। টের পেয়ে একজন আসামি পালিয়ে যায়। আটক গাড়ি তল্লাশি করে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ শলাকা আমাদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় শেখ নাসির উদ্দিন বিড়ি, যার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সালেক জানান, আটক আসামি ও পলাতকদের বিরুদ্ধে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া টাকাসহ বিড়ি জব্দ করা হয়।