সিলেটের হরিপুর থেকে শাহপরাণ এলাকা পর্যন্ত পাহাড় টিলা ধ্বংস লীলা বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিনই রাতের আঁধারে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালায়। অভিযানে কোনো কাজ হয় না। ২-১ দিনের মাথায় আবার পাহাড় ও টিলা কাটা শুরু হয়। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে এই এলাকার পাহাড় ও টিলা অচিরেই নিরাকার হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হরিপুর থেকে শাহপরাণ পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে ১০ টি স্পটে পাহাড় ও টিলা কাটা হয়।
ওইসব স্পটের অন্যতম হচ্ছে জৈন্তাপুর উপজেলার কোহাইঘর দ্বিতী খন্ড শাহজালাল কলেজ এলাকা। এই স্পটে রাতের আধাঁরে একটি টিলা কেটে ইতোমধ্যে প্রায় মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ফখরুল নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ওই টিলা কাটা চলছে। স্কেবেটর আর ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করে টিলা কাটার ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। সকালের আলো ফুটে উঠার আগেই পাহাড় ও টিলা কাটার সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়।
হরিপুরের সাত নম্বর শিকার খা এলাকায় কয়েকদিন ধরে দাপটের সাথে পাহাড় কেটে মাটি সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে নাজমুল আলম। এই নাজমুল আলমের কাছ থেকে প্রতিদিনই চাঁদা সংগ্রহ করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম ভাঙ্গিয়ে।
ওই একই অবস্থা ঠাকুরের মাটি এলাকায়। এখানে কামরুল ও মসদ্দর পৃথকভাবে পাহাড় ও টিলা কাটছে রাতের আঁধারে। ২-৩ দিন আগে এই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। ২-৩ দিন যেতেই আবার পাহাড় ও টিলা শুরু হয়েছে। হরিপুরের শিকারখা এলাকায় পাহাড় টিলা কাটছে সাহাবুদ্দিন। উমনপুরে পাহাড়-টিলা কাটা হচ্ছে কামরুলের নেতৃত্বে।
এই পাহাড় ও টিলা কাটাকে কেন্দ্র করে একটি দালাল চক্র দীর্ঘদিন ধরে ফায়দা লুটে আসছে। দালাল চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদেরকে বড়লেখার মন্ত্রীর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘনিষ্ঠ লোকজন পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে। পাহাড় ও টিলার মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে দালাল চক্রটি। গত দুইদিন ধরে দালাল চক্রটি এই এলাকার পাহাড় ও টিলার কয়েকজন মালিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা সংগ্রহ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছে দালাল চক্রের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসেন জানান, ওইসব এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। মামলাও দেয়া হয়েছে। আবার পাহাড়-টিলা কাটলে আবারও মামলা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী আবদুল করিম কিম সিলেট অঞ্চলে পাহাড় ও টিলা কাটার বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যারা এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা তারা না নিলে অন্য কারোর পক্ষে কিছু করার নেই। এভাবে সিলেটের পাহাড়-টিলা বিলিন হয়ে যাচ্ছে। যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।