সিলেটের রিকাবীবাজারে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের দ্রæত সংস্কারের দাবিতে সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেছেন।
২৮ জানুয়ারি রবিবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র উদ্যোগে স্মারকলিপি পেশকালে সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি শামসুল আলম সেলিম, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোকাদ্দেছ বাবুল, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বিপ্রদাস ভট্টাচার্য্য, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য প্রতীক এন্দ টনি, সাংস্কৃতিক সংগঠক বিভাষ শ্যাম যাদন, নৃত্যশিল্পী সংস্থার বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক নিলাঞ্জনা দাশ যুঁই, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও অর্থ সম্পাদক অচিন্ত কুমার দে।
কবি নজরুল অডিটোরিয়াম সংস্কারের দাবিতে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেল ৩টা থেকে অডিটোরিয়ামের প্রধান ফটকে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচীতে সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ফেডারেশানের নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচী ও স্মারকলিপিতে সংহতি প্রকাশ করেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, সিলেট বিভাগ, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ আবৃত্তি শিল্পী সংসদ ও জাতীয় কবিতা পরিষদ।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, সিলেটের নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মী সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা এবং আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীন সার্বোভৌম একটি দেশের মৌলিক অগ্রগতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুস্থ বিকাশের স্বার্থে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা সিলেটের সকল সংস্কৃতিকর্মী এও বিশ্বাস করি যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অগ্রযাত্রায় আমরা সকল সময়ে যাবতীয় সুস্থ সংস্কৃতি'র বিকাশ লাভে বদ্ধ পরিকর।
তারা বলেন, বিভাগীয় এই শহরে আমরা আমাদের সীমিত অবকাঠামো ব্যবহার করেই রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এই অডিটোরিয়ামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়ে আছে, এছাড়াও অডিটোরিয়ামের আলোক সরঞ্জাম ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে, মঞ্চের পাঠাতন বেশকিছু জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে, অডিটোরিয়ামের ছাদ রিপিয়ারিং ও মুক্তমঞ্চ সংস্কার অতিব প্রয়োজন। এই সমস্যা বিদ্যমান থাকায় কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সংস্কৃতি চর্চা ব্যহত হচ্ছে। কিন্তু ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আমরা বিগত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং তারিখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সমস্যা সমাধানের জন্য লিখিত আবেদন করেছিলাম। এর প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ, সিলেটর’র তত্ত্বাবধানে হল সংস্কারের ব্যয়ভার নির্ধারণ করা হয় এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে বিগত ২ নভেম্বর ২০২২ইং তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগে কবি নজরুল অডিটোরিয়াম মেরামতের প্রাক্কলিত অর্থ বরাদ্ধ প্রদানের আবেদন করা হয়। প্রায় দুই বছর যাবৎ অডিটোরিয়াম সংস্কারের বিষয়ে তারা নানাভাবে যোগাযোগ করে আসলেও অদ্যাবধি তার কোন সুরাহা হয়নি।
তারা উল্লেখ করেন, ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৮১ সালে অডিটোরিয়াম যাত্রা শুরু করে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অডিটোরিয়ামের বেশকিছু সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আলোক যন্ত্রপাতি সহ অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।
দীর্ঘদিন যাবত মঞ্চের আলো ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতিসমূহও সম্পূর্ণরূপে বিকল হয়ে রয়েছে। যেকোন নাটক বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য বাইরে থেকে আলো যন্ত্রপাতিসমূহ ভাড়া আনতে হয়। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বিকল থাকায় ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠান আয়োজন করা খুবই দুর্বিসহ হয়ে উঠে। তাই নেতৃবৃন্দ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের উল্লেখিত সমস্যা সমূহ দ্রুত সমাধান করা ও সংস্কার করা অতীব জরুরী বলে দাবি করেন।