মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা সীমান্তে বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী এমপি ও ভারতের ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মিলে এই হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
দুই দেশের ২ দশমিক ৭২ একর জায়গার উপর এই বর্ডার হাট নির্মাণে ৫ কোটি ৩০ লাখ রুপি অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ হবে। পুরো টাকা দেবে ভারত সরকার। বাংলাদেশের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমাঘাট ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার কমলপুর মোড়াছড়া সীমান্তে এই বর্ডার হাট স্থাপন করা হচ্ছে।
ভিত্তিপ্রস্তর শেষে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, এই বর্ডার হাটের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন হবে। পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান অনেকটা কমে আসবে। দু’দেশের মানুষের চাহিদা অনুয়ায়ি এই হাটে পণ্য উঠবে। সীমান্ত হাট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে।
ভারতের ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, যখন সীমান্তে দু’দেশের পন্যগুলো খোলাবাজার হয়ে যাবে তখন চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে। ইউরোপের দেশগুলোতেও একইভাবে কাজ হয়। হাট চালুর ফলে দুদেশের বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমান্তবর্তী মানুষেরা হাতের নাগালে পাবে। এতে দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধও বাড়বে।
ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরও বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের ৮টি স্থানে বর্ডার হাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি নিয়ে ৩টি বর্ডার হাট চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জলপথও চলমান রয়েছে।
বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কুমার দেব, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, ভারতীয় দুতাবাসের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়ালসহ ত্রিপুরা রাজ্যের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট রুমানা ইয়াসমিন, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের নোম্যান্সল্যান্ডে ২ একরের বেশি ভুমিতে কুরমাঘাট-কমলপুর মোড়াছড়া বর্ডার হাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে ৫ কোটি ৩০ লাখ রূপি ব্যয়ে এই বর্ডার হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার এই হাট বসবে। তবে স্থানীয়দের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় হাটের দিন বৃদ্ধি করতে পারবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাটে বেচাকেনা করা যাবে। তৈরি পোশাক, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মুরগি, শুঁটকি, সুপারি প্রভৃতি পণ্য বেচাকেনা চলবে বর্ডার হাটে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল সীমান্ত হাট কার্যক্রম। সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে চাঙ্গা করে একদিকে তাদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন।