ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গুচ্ছগ্রাম থেকে আশ্রয়ণ: ভাগ্য বদলেছে উপকূলবাসীর

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২০ জুলাই ২০২২ ১০:৪৫:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

উপকূলীয় উপজেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতি। দুর্যোগ-দুর্বিপাক যার নিত্যসঙ্গী। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ংকর থাবায় এই উপজেলার কত-শতজন হারিয়েছেন আপনজন-ভিটেমাটি, তার ইয়ত্তা নেই। তবে উপকূলীয় এই উপজেলায় যেমন আঘাত এসেছে, তেমনি আলোকিতও হয়েছে। উপকূলের নানা সংকটের পরও আশ্রয়ণের আলোয় সমৃদ্ধ হয়েছে রামগতি।

১৯৭০ থেকে ২০২২, বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা; প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই অঞ্চলের জন্য খুলে দিয়েছেন হাত। সত্তরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত এই জনপদে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বজন ও ভিটেমাটি হারা শত শত পরিবারকে পুনর্বাসন করেছেন। সেই থেকেই আশ্রয়ণের ধারণার উদ্ভব হয়। যার চিহ্ন ধরে রাখতে এখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভও করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও এই উপকূলে ক্ষতিগ্রস্তদের আপন করে নিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। সত্তর থেকে এ পর্যন্ত রামগতির ২ হাজার ৯৩২ পরিবারকে পুনর্বাসন করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) লক্ষ্মীপুরের সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে রামগতির চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আশ্রয়ণের গুচ্ছগ্রাম এখন সমাজের মূলধারার মতোই একটি ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে। সর্বহারা সেসব মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখানকার সেই ২১০ পরিবার এখন প্রায় ৬ শতাধিক পরিবারে রূপ নিয়েছে।

বিশাল এই গুচ্ছগ্রামে গিয়ে দেখা হয় ষাটোর্ধ্ব মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে। ৭০ এর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ৭০ এর সাইক্লোনে আমরা সব হারিয়েছি। সর্বহারার মতো অবস্থা। বঙ্গবন্ধু দেখতে এসেছিলেন। আজকে যেটা সুন্দর গ্রাম দেখছেন, সেটা ছিল মরুভূমির মতো মাঠ। একটা চর। বঙ্গবন্ধু তখন এই জায়গা থেকে আমাদের প্রতি পরিবারকে ২.৫ একর করে জায়গা দিয়েছিলেন।

তারা বলছেন, প্রত্যেকের বাড়ির জন্য ৩০ শতক ও কৃষির জন্য ২ একর ২০ শতক জমি। মোট ৬০০ একর ভূমিতে গুচ্ছগ্রাম। ৫০০ একর লোকদের নামে। ১০০ একর কমন। যেখানে ২২টি পুকুর, ১০ ফ্যামিলির জন্য একটা করে দিঘি, মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, বাজার, খেলার মাঠ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। দিঘিতে সবাই মিলে মাছ চাষ করেন। বঙ্গবন্ধুর ঘর করে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডের পর আর ঘর হয়নি।

‘ওনার (বঙ্গবন্ধু) সময়ে সারাদেশে মোট ৭টা গুচ্ছগ্রাম হয়েছে। উনি থাকলে আরও বহু কিছু হতো।’ যোগ করেন মেজবাহ উদ্দিন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফিরে আমাদের এখানেও আসেন। নিজের হাতে মাটি কেটে এই গুচ্ছগ্রাম শুরু করেন।

গুচ্ছগ্রাম থেকে আশ্রয়ণ: ভাগ্য বদলেছে উপকূলবাসীর

তিনি বলেন, তখন এই জায়গা ছিল মরুভূমির মতো। ঘাসও ছিল। আমরা ঘরবাড়ি করে নিয়েছি।

কথা হয় আরেক উপকারভোগী মাইনুদ্দিন দুলালের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, তার ৩০ শতক জমি আছে। বাকিটা মামলা করে খুইয়ে ফেলেছেন। পাশ থেকেই এনামুল হক নামের আরেকজন জবাব দেন, বঙ্গবন্ধু যতদিন ছিলেন গায়ে মাছিও বসেনি। পরে অনেকে অনেকভাবে হয়রানি করেছে।

চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ২১০টি পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রতিটি পরিবারকে ২.৫ একর করে ভূমি দিয়ে ছিন্নমূল ও অসহায় এসব মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম সর্বপ্রথম শুরু করেন। এখন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এই ইউনিয়নের কলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫.১৫ একর অবৈধ দখল উদ্ধারকৃত জমিতে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে, ভিক্ষুক, বিধবা ও অসহায় ১ হাজার ৪২৫ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।