আমনের ভরা মৌসুম। কৃষকের গোলায় ধান ভরা, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ। সরকারের শুল্ককর প্রত্যাহার ও আমদানির সুবিধায় মজুতের ঘাটতিও নেই। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ, কারণ চালের বাজারে চলছে সিন্ডিকেটের কারসাজি।
সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুত ১২ লাখ টনেরও বেশি। এর মধ্যে চালই রয়েছে প্রায় ৮ লাখ টন। এমন পরিস্থিতিতেও মিলাররা নিজেদের মুনাফা বাড়াতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মিলপর্যায়ে ৫০ কেজি মিনিকেট চালের প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দীন জানান, মিল থেকে মিনিকেট চালের প্রতি বস্তা এখন ৪,০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, যা এক মাস আগেও ৩,৪০০ টাকা ছিল। নাজিরশাইলের প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৪০০-৫০০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৭২-৭৫ টাকা। নাজিরশাইল চালের কেজি ৮০-৮৬ টাকা এবং মাঝারি জাতের চাল ৬৩-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ জেলার চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার জানান, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামালের দাম বেড়েছে। বিশেষত জিরা ও কাটারি জাতের ধানের মনপ্রতি দাম ২০০-২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চালের উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসল সমস্যা কাঁচামালের খরচ বৃদ্ধির চেয়েও বেশি সিন্ডিকেটের কারসাজি। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে তদারকি সংস্থার কার্যক্রম থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে দাম বাড়ছে। ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না।
সরকার চালের দাম সহনীয় রাখতে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে অন্যান্য শুল্ক তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তর বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি চালাচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিদিন বাজারে অভিযান চালাচ্ছেন।
তবে এসব কার্যক্রম সত্ত্বেও চালের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। পাইকারি থেকে খুচরা বাজার সব জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রমজানের আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে ভোক্তারা আরও সংকটে পড়বেন। বাজার তদারকিতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সরবরাহ পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
চালের ভরা মৌসুমে এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধরনের চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে বাজার ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন ভোক্তারা।
বায়ান্ন/পিএইচ