সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার পানি বন্দি মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসতে উদ্ধার অভিযানে জালালাবাদ ক্যান্টমেন্টের সেনা বাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছেন।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ওই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বসতবাড়ি রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
সারী ও বড় নয়াগং নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় ফেরীঘাট বড়খলা এলাকায় তিনটি পরিবারের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে নিজপাট, জৈন্তাপুর, দরবস্ত, চারিকাটা, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার আসামপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইমরান আহমদ সরকারী মহিলা কলেজ বিরাইমারা সরকারী প্রাথমিক, ডুলটিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়, চারিকাটা উচ্চ বিদ্যালয় সহ আর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্টান পানিতে তলিয়ে গেছে।
নিচু এলাকার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় সাধারণ মানুষ তাদের জানমালের নিরাপত্তায় চরম দুভোর্গ'র মধ্যে রয়েছে। নিজের বসতবাড়ি ফেলে হাজার হাজার মানুষ জীবন রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাচ্ছেন। টানা বৃষ্টি পাতের ফলে জৈন্তাপুর উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জনগণকে উদ্ধার করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি ইউনিয়নে নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ, স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার কাজে সহায়তা করছেন।
হরিপুর হতে দরবস্ত পর্যন্ত অন্তত ২০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের পাশে অনেকই তাদের পরিবার পরিজন এবং গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় গ্রহন করেছেন। বাশেঁর খুটি দিয়ে তাবু স্থাপন করে অবস্থান করেছেন। উপজেলারর নিচু এলাকার বাসিন্ধাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে ২৪টি আশ্রয় কেন্দ্র নারী-পুরুষ, শিশু সহ নানা বয়সি মানুষ অবস্থান নিয়েছেন। বন্যায় উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। জৈন্তাপুর, নিজপাট, দরবস্ত, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যায় জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আটকাপড়া মানুষদেরকে উদ্ধার করতে নৌকা রাখা হয়েছে। আশ্রয়ন কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি পাহাড়-টিলা ও নদীর তীরবর্তী বাসিন্ধাদের সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়ে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে আসার আহবান জানান।
তিনি আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে জরুরী কন্ট্রল রুম চালু করা হয়েছে। উপজেলায় ২৪ টি আশ্রয়ন কেন্দ্র চালু আছে। প্রশাসন পক্ষ হতে ৬টি ইউনিয়নে ২৪ মেট্রিকটিন চালু বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী, ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম, মো. ইন্তাজ আলী, মো. সুলতান করিম, বাহারুল আলম বাহার, রফিক আহমদ, কামরুজ্জামান চৌধুরী সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ বন্যা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে অসহায় মানুষদের মধ্যে শুকনো খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যােগে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জৈন্তাপুর উপজেলা-কে বন্যা দূর্গত এলাকা ঘোষনা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তিগণ সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী'র সদস্যরা জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার দূর্গত ও দূর্গম এলাকার পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার সারীঘাট এলাকায় সেনাবাহিনী অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন।