টাঙ্গাইল পৌর শহরের বেড়াডোমা এলাকায় লৌহজং নদীর উপর সেতু নির্মাণের সময় ভেঙে পড়ায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সঠিক দায়িত্ব পালন না করে অনিয়ম জানা সত্বেও আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর-১ শাখার উপ-সচিব আব্দুর রহমান সাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য পাওয়া যায়। চিঠিগুলো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই চিঠিতে ব্রীজ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্রিকস্ অ্যান্ড বিল্ডিং লিমিটেড এবং দ্যা নির্মিতি কে (জেভি) প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সেতু নির্মাণে ডিজাইন ও প্রাক্কলন যথাযথ অনুসরণ করেনি। একারণে প্রতিষ্ঠান দুটিকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলীরা হলেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী রাজীব গুহ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিন্নাতুল হক।
দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরনের অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তির ১০ কার্য দিবসের মধ্যে লিখিত ভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন সেতুটির ঢালাই কাজের পূর্বে সেন্টারিং ও সাটারিং’এর সময় ঠিকাদার ড্রয়িং ও ডিজাইন অনুসরণ করেননি। সেখানে বল্লি ও বাঁশের খুটি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে ওই প্রকৌশলীরা শুধু চিঠির মাধ্যমে তাদের নিষেধ করেন। তারা ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করার কোন ব্যবস্থা নেননি। বরং ঢালাইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন। এটিকে দায়িত্বে চরম অবহেলা প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
এদিকে পৌরসভার প্রকৌশলীদের সঙ্গে ঠিকাদার পক্ষের স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং সেতু নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে জেনেও কোন পদক্ষেপ না নেয়া, কাজের অগ্রগতির তুলনায় অতিরিক্ত বিল প্রদান করায় মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তাকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, তারা মন্ত্রাণালয়ের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চিঠির জবাব দিবেন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতুটি নির্মাণ কাজ পেয়েছিলেন ব্রিকস্ অ্যান্ড বিল্ডিং লিমিটেড এবং দ্যা নির্মিতি কে (জেভি) নামক দুটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আমিরুল ইসলাম খান ও রফিকুল ইসলাম খান জামিল, সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিয়েছিলেন। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একটি অঙ্গীকারনামা দেয়, সেখানে উল্লেখ করা হয় এমএস পাইপের পরিবর্তে গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করার কারণে ঢালাই চলাকালে কোনো ক্ষতি হলে এর ক্ষতিপূরণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন রাতে লৌহজং নদীর উপর সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আট মিটার প্রস্থও ৪০ মিটার ওই ব্রীজের নির্মাণ করার সময় সেতুটি দেবে যায়। তারা ব্রীজের নিচে এমএস পাইপের পরিবর্তে কাঠের বল্লি ও বাঁশের খুটি ব্যবহার করেন। ফলে ঢালাই করার তিনদিনের মধ্যে সেতুটি দেবে যায়।