জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরো এক বছর তিন মাস। কিন্তু এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আগামীতে কোন্ দল থেকে কে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোন্ এলাকায় কে এমপি নির্বাচিত হলে জনস্বার্থ প্রধান্য পাবে তা নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছে না। এই আলোচনায় উঠে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামের তালিকা। স্থান পেয়েছে নতুন নেতৃত্বের নাম।
সিলেট অঞ্চলও ওই আলোচনা থেকে পিছিয়ে নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এই আলোচনার মধ্য দিয়েই বের হয়ে আসছে জনবান্ধব প্রার্থীদের নাম।
জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৪ আসন গঠিত। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এই আসনে আওয়ামী লীগসহ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় উঠে আসছে।
স্থানীয়রা আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জনবান্ধব প্রার্থী কামনা করছেন। এই আলোচনায় স্থান পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামী নেতা মো. জয়নাল আবেদীনের নাম। তিনি জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা উত্তরের সেক্রেটারি। ১৯৮৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগ দেয়া জয়নাল আবেদীন ৩৮ বছরের রাজনীতিতে ১০ বছর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে সিলেট মহানগর ইসলামী ছাত্র শিবিরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি জামায়াতে ইসলামী সিলেট জেলা উত্তরের সেক্রেটারি।
আবাসন খাতের সফল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ২০০৯ সালে ১৭ হাজার ভোট পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৫ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ২৫ হাজার ভোট পেয়ে। দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আর অংশ গ্রহণ করেননি। কিন্তু নিজকে আত্মনিয়োগ রেখেছেন দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই জৈন্তাপুরের শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ওই সময় জৈন্তাপুর উপজেলার শিক্ষার হার ছিল ৩২ ভাগ। দায়িত্ব ছেড়ে আসার সময় শিক্ষার হার ৬০ ভাগে দাড়ায়। শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে ও মান উন্নয়নে তিনি নিয়েছিলেন বিশেষ পদক্ষেপ। প্রাইমারি থেকে শুরু করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। পদক্ষেপ নিয়েছিলেন হোম ভিজিটের। যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত হতেন না তাদের বাড়িতে ভিজিট করা হতো। শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতের কারণ খুঁজে বের করা হতো। ওই সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হতো। এছাড়া ভালো শিক্ষার্থীদের পৃথক করে তাদেরকে আবাসিক ব্যবস্থায় পাঠদান করা হতো। এতে উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল লাভ করতে শুরু করে। যেসব ইউনিয়নে হাইস্কুল ছিল না সেসব ইউনিয়নে হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জেন্ডার বৈষম্য দূর করে জৈন্তাপুর পাইলট স্কুলে ছাত্র ও ছাত্রীদের পরাশোনার নিয়ম চালু হয় জয়নাল আবেদীনের পদক্ষেপের কারণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষির দিক দিয়ে এই উপজেলা অনেক পিছিয়ে ছিল। কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে তিনি নানান পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। ২০০ কিলোমিটার খাল খনন করিয়েছিলেন পানির অভাব দূর করতে। কৃষকের চাষ পদ্ধতি সহজ করে দিতে কাজ করেছেন। কৃষি খাতে ৭৫ ভাগ ভুর্তকিত ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে এই উপজেলায় এক ধরণের কৃষি বিপ্লব শুরু হয়। এছাড়া সমাজ সংস্কারসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জয়নাল আবেদীন।
উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব থেকে সরে আসার পরপরই শুরু হয় করোনাভাইরাসের দুর্যোগ। এই দুর্যোগের সময় জয়নাল আবেদীন নিজকে ঘরবন্দী না রেখে অসহায় মানুষের পাশে ছুটে যেতে থাকেন। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কর্মহীন মানুষের পাশে ছুটে যেতে থাকেন খাদ্য সহায়াতা নিয়ে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিতসা সেবায় সব ধরণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার দাফন কাপনের ব্যবস্থা করেছেন নিজে উপস্থিত থেকে। এই দাফন কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েকটি টিমও গঠন করেছিলেন। সব ধরণের স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তৃণমূল পর্যন্ত। ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ দিয়ে ওইসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেন জয়নাল আবেদীন।
করোনা দুর্যোগের পরপরই শুরু হয় বন্যা। এই বছরের বন্যায় জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। বন্যার শুরু থেকেই দলীয়ভাবে একাধিক টিম নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযানে নামেন জয়নাল আবেদীন। ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চষে বেড়াতে থাকেন বন্যাকবলিত এলাকা। বন্যাকবলিত মানুষজনকে উদ্ধারসহ গবাদী পশু উদ্ধার কাজে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। বন্যা পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুর্নাবাসনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩০০ পরিবার চিহ্নিত করে তাদেরকে নতুন ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক পরিবার নতুন ঘর পেয়েছেন। বাকি পরিবারগুলো তাদের নতুন ঘর অচিরেই পেয়ে যাবেন।
বর্তমানে জামায়াতের এই নেতা জয়নাল আবেদীনকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। অনেকের মতে জয়নাল আবেদীন আগামীতে সিলেট-৪ আসনে এমপি নির্বাচিত হলে অনেক এগিয়ে যাবে এলাকা। সম্ভাবনাময় এলাকার উন্নয়নের দ্বারও উন্মুক্ত হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।