ঢাকা, শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

নরসিংদী পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদার ৩ কোটি টাকা সম্পাদকের পকেটে

নাজমুল হাসান, নরসিংদী : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৫৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

নরসিংদী জেলা ট্রাক, ট্র্যাংকলড়ী কার্ভাডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং ঢ-৩৮৯৯) সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের থেকে চাঁদা আদায়ের ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে নরসিংদীর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাহার নং-৯৩৫/২৩।
মামলার বাদী ওই ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া।
জেলার ৬টি উপজেলার প্রায় ৩ হাজার পরিবহন শ্রমিকদের থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ড্রাইভার, হেলপার শ্রমিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এবং শ্রমিক ইউনিয়ন সদস্যদের  কল্যাণে নরসিংদী জেলা ট্রাক, ট্র্যাংকলড়ী কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল থেকে সংগঠনের প্রায় তিনহাজার শ্রমিকের জনপ্রতি ভর্তি ফি বাবদ নগদ ২০০০ টাকা ও কার্ড নবায়ন বাবদ নগদ ১০০০ টাকা সহ মোট ৩০০০ টাকা আদায় করেন। ১২ বছরে কোষাগারে জমা হয় প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। শ্রমিক কল্যাণে এককালীন দান হিসেবে জমা হয় আরও ২০ লাখ টাকা। বিগত সময়ে বিভিন্ন কল্যাণের কথা বলে সংগঠনের শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা। দীর্ঘ ১২ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে সংগঠনের সদস্যরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাপ দিতে থাকেন। এতেই বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। শ্রমিকদের চাপের মুখে ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জাকির মৃধা (সাধারণ সম্পাদক) ও মোঃ সুলতান (ক্যাশিয়ার) এর নিকট আয়-ব্যয়ের হিসাব চান। তারা আজ নয় কাল বলে তালবাহানা করতে থাকেন। পরে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ইসলামী ব্যাংক, সাহেপ্রতাব শাখার সঞ্চয়ী একাউন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন একাউন্ট শূন্য। এনিয়ে জাকির মৃধা ও সুলতানের সাথে জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নেয়। এ সুযোগকে কাজ লাগিয়ে সভাপতি পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন জাকির মৃধা। শ্রমিকদের চাপ সহ্য করতে না পেরে জাহাঙ্গীর আদালতে জাকির হোসেন মৃধাকে প্রধান আসামি করে আরও ৩ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার খবর শুনে জাকির হোসেন মৃধা গত ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) সাহেপ্রতাব মোড়ে এক প্রতিবাদ সভা করেন। ওইসভায় উপস্থিত ছিলোনা সংগঠনের কোনো শ্রমিক বা সদস্যরা। উপস্থিত ছিলেন স্হানীয় মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। সভা থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রকাশ্যে হুমকিও প্রদান করেন উপস্থিত বক্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, আমাদের কষ্টের অর্জিত টাকা। মাথার গাম পায়ে ফেলে টাকা (চাঁদা) জমা দিয়েছি। আমাদের টাকা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আমার জানা মতে কয়েক কোটি টাকা শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে নামে আছে। অনেক মৃত শ্রমিকদের ১ লাখ টাকা করে কল্যাণ ফান্ড থেকে দেওয়ার কথা ছিলো। তা এখনও দেওয়া হয়নি। জাকির মৃধা কে? এবং তিনি আগে কি ছিলেন তা আমরা জানি। দামীদামি পোষাক পড়ে আর মাস্তান দিয়ে হুমকি প্রদান করে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। দরকার হলে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ৪ বারের নির্বাচিত সভাপতি। লেখাপড়া জানিনা। ব্যাংক একাউন্ট খোলার কথা ছিলো যৌথ স্বাক্ষরে। কিন্তু তারা আমাকে বাদ দিয়ে ইসলামী ব্যাংক সাহেপ্রতাব শাখায় একাউন্ট খুলে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই একাউন্টে কোনো টাকা নেই। টাকা কোথায় তা জানতে চাইলে জাকির মৃধা আমাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বারবার তাকে তাগদা দিলে সে আমাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তার এই বহিষ্কার গঠনতন্ত্র বিরোধী। গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৬নং এর (ক) তে বলা আছে প্রত্যেক সদস্য ইউনিয়নের ধার্যকৃত চাঁদা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে। ইউনিয়ের ভর্তি ফিস একশত টাকা ও মাসিক চাঁদা বিশ টাকা। সাধারণ সভায় ইউনিয়নের ৫১% সদস্যের উপস্থিতি বা ভোটের মাধ্যমে চাঁদার হার বাড়ানো বা কমানো যাবে। শুধু তাই নয় সাধারণ সভায় যেকোনো সদস্যের চাঁদা তিন মাস পর্যন্ত মাফ করে দিতে পারবে। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকে ভর্তি ফি ১০০ টাকার স্হলে ২ হাজার টাকার এবং কার্ড নবায়ন বাবদ ১ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে আব্দুল কাদির মোল্লার এককালীন অনুদান জমা হয় ২০ লাখ টাকা। এসব টাকার হিসাব চাওয়ায় জাকির মৃধার সাথে আমার দ্বন্দ্ব। সম্পাদক, ক্যাশিয়ার মিলে সংগঠনের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। আমি শ্রমিকদের অর্থ আদায় করে তাদের প্রত্যেকের মাঝে ফেরত দিতে চাই। সেজন্য আাদলতে জাকির সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আদালত আমার আরজি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলা করার পর থেকে একের পর এক হুমকি-ধমকি আসছে। যেকোনো সময় জীবনের উপর আঘাত আসতে পারে। পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি সত্য ও ন্যায়ের পথে আছি। হারাম খাইনা। আইনি লড়াইয়ে সত্য বের হয়ে আসবে (ইনশাআল্লাহ)।
এবিষয়ে জানতে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধার কাছে জানতে চাইলে, ক্যামেরার সামনে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।