ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বকেয়ার তথ্য মুছে তিতাসের ১২৪৭ গ্রাহককে পুনঃসংযোগ, লেনদেন ২০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৮ জুন ২০২২ ০৭:৫১:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় রাজধানীর কুড়িল ও ভাটারা এলাকার ১ হাজার ২৪৭ জন গ্রাহকের। এসব গ্রাহকের প্রত্যেকের কাছেই বড় অংকের বিল ও জরিমানা পাওনা ছিল তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের। তারপরও তারা সেসব সংযোগ ফিরে পেয়েছেন। এজন্য বকেয়া বিল কিছুই পরিশোধ করতে হয়নি! তারা পুনঃসংযোগ পেয়েছেন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে। দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ জালিয়াতির পেছনে প্রায় ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

জালিয়াতিতে জড়িত সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে দুদক। দুদক বলছে, এমন অনিয়মে সরকার তথা তিতাস গ্যাস কোম্পানি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। সম্প্রতি এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

প্রায় সাড়ে ১২শ গ্রাহক আমাদের সার্ভারে এন্ট্রি হয়ে গিয়েছিল এক রাতে। কম্পিউটারে এন্ট্রি হয়ে গিয়েছিল। এখন এই এন্ট্রির জন্য ওখানের সিকিউরিটি গার্ড... ওখানের সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে দু-তিনজন লোক ঢুকেছে। তারা ঠিকাদারের লোক। তারা অফিসে ঢুকেছে রাতে। যেহেতু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিল ওখানকার ডিজিএম-ম্যানেজার, তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রতন চন্দ্র দে, সিনিয়র নিরাপত্তা প্রহরী মাসুদ রানা, আবুল কালাম আজাদ, মাসুদুল হক, নিরাপত্তা প্রহরী ওয়াসিম, ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন সরদার (মিটারিং অ্যান্ড ভিজিল্যান্স), উপ-ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম (রাজস্ব), উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন জাবেদ ও উপ-ব্যবস্থাপক মো. রজব আলী এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামী এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রাকিব হোসেন।

তিতাস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের যোগসাজশে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে এসব সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাহকদের শুধু পুনঃসংযোগ দেওয়াই হয়নি, কর্মকর্তাদের সহায়তায় গ্রাহকদের নামে থাকা বকেয়া বিলের তথ্যও মুছে ফেলা হয়। এসব তথ্য সংরক্ষিত ছিল তিতাসের কুড়িল অফিসের কম্পিউটারে। মুছে ফেলার পর এসব গ্রাহকের নাম দেখানো হয় নতুন সংযোগ বা পুনঃসংযোগ গ্রহিতা হিসেবে।

আরও জানা গেছে, তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক রতন চন্দ্র দে, ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন সরদার (মিটারিং অ্যান্ড ভিজিল্যান্স), উপ-ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম (রাজস্ব), উপ-সহাকারী প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন জাবেদ ও উপ-ব্যবস্থাপক মো. রজব আলী আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পুরোনো গ্রাহকদের বকেয়ার তথ্য মুছে ফেলেন।

 অপরাধ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে ও প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে ১০ আসামিসহ কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহক ও কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানির তথা সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ হয়েছে। 

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভাটারা থানায় মামলা করে তিতাস। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৮/৪০৯/৪২০/৪৪৮/১০৯ ধারায় মামলা হয়েছিল। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ভাটারা থানার মামলার এজাহারে বলা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামী এন্টারপ্রাইজের মালিক রাকিব উদ্দিন অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে নিয়ে তিতাস অফিসে প্রবেশ করেন। যাদের মধ্যে ৪-৫ জন ডাটা এন্ট্রিতে পারদর্শী ছিলেন। তিতাস কর্মকর্তাদের সহায়তায় তারা কুড়িল অফিসের কম্পিউটার রুমে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেন। সংযোগ বিচ্ছিন্নকৃত ওই গ্রাহকের সংযোগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অবৈধভাবে তা দেওয়া হয়। এজন্য গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তারা।

এজাহারে আরও বলা হয়, তিতাসের তদন্তে রাকিবের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সিনিয়র নিরাপত্তা প্রহরী মাসুদুল সেদিন দায়িত্বে থাকার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত থেকে তাদের অফিস বিল্ডিংয়ে প্রবেশে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। আরেক নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কালাম আজাদ তিতাস গ্যাসের মিরপুর অফিসে কর্মরত থাকলেও বহু সংখ্যক গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ দেওয়ার পেছনে জড়িত থাকার বিষয়টি তিতাস গ্যাসের তদন্ত কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। অপরাধ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানি কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে ও প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে ১০ আসামিসহ কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে গ্রাহক ও কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণা করে কোম্পানির তথা সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া ও মান যাচাইবিহীন জরুরি গ্যাসের অবৈধ প্রক্রিয়ায় সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে জনজীবনকে হুমকির সম্মুখীন করা হয়েছে।