সিলেটের বিশ্বনাথের সিংগেরকাছ পশ্চিমগাঁওয়ে সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবারক আলী এবং আব্দুল মনাফ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আবারক আলীর পক্ষের আব্দুল খালিক (৪৮) ও আব্দুন নুর (৪৬) নিহত হন।
এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর নিহত আব্দুল খালিকের ছেলে নুর উদ্দিন বাদী হয়ে আব্দুল মানফসহ ৪৩জনের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় আব্দুল মনাফ পক্ষে আজমান আলী বাদী হয়ে পাল্টা একটি মামলা দায়ের করেন। পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের দীর্ঘ ৯বছর ৯মাস পর বাদী ও আসামি পক্ষের পৃথক এ দু’টি মামলার রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
বৃহস্পতিবার সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। নুর উদ্দিনের দায়ের করা মামলার রায়ে আব্দুল কাদির (৩০) নামে পলাতক থাকা একজনকে মৃতুদন্ডসহ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডসহ আরও ৯জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ফলে মারা যাওয়া ৩জন ও মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ সেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামসহ ১৫জনকে বেখছুর খালাছ প্রদান করেছেন আদালত।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কাদির পশ্চিম গাঁওয়ের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে। সাজাপ্রাপ্ত বাকি ১০ আসামির মধ্যে পশ্চিমগাঁওয়ের আব্দুল মনাফ (৪৬), তারে ছলে সুহেল আহমদ (৩৩) ও ইলিয়াস আলীকে (৩৮) ১০ বছরের কারাদন্ডসহ ১ লাখ টাকা অর্থদ- এবং অনাদায়ে আরও ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে। দশঘর গ্রামের ধন মিয়াকে (৪৫) ৩বছরের কারাদন্ড ও ৫হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমগাঁওয়ের আব্দুল মতিন (৩৫), ইসলাম উদ্দিন (৩০), আলম (২৯), রেজাউল করিম (৩০) ও ছাতকের কাদিপুরের রুবেল আহমদকে (২৮) এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আজমান আলীর দায়ের করা (মামলার বিশ্বনাথ জিআর ১৭৮/২০১২ইং) পাল্টা মামলার রায়ে হত্যা মামলার বাদী নুর উদ্দিন মেম্বারের চাচাতোভাই দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবারক আলী (৫৫) ও আকবর আলীকেও (৪৫) এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডসহ এক হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন আদালত।
জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করেন মৃত সমুজ আলীর ছেলে আব্দুল মনাফ (৪৬)। এনিয়ে বিরোধের জেরে ২০১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাধা প্রদানকারী একই গ্রামের বাসিন্দা ও দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবারক আলী এবং আব্দুল মনাফ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাদে। এতে আবারক আলীর পক্ষের আব্দুল খালিক (৪৮) ও আব্দুন নুর (৪৬) নিহত হন। এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর আব্দুল খালিকের ছেলে নুর উদ্দিন বাদী হয়ে সিংরাওলীর অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামকে প্রধান আসামিসহ ৩৪জনের নাম উল্লেখ করে বিশ^নাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে সিলেট গোয়েন্দা পুলিশের (সিআইডি) তৎকালীন এসআই আব্দুল আহাদ অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামসহ ২৭জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আর মমালা চলমান অবস্থায় মারা যান ৩জন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুল মনাফ, ধন মিয়া, আব্দুল মতিন, রুবেল, আবারক আলী ও আকবর আলীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। আর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আব্দুল কাদির, সাজাপ্রাপ্ত আসামী সুহেল, ইলিয়াছ আলী, ইসলাম উদ্দিন, আলম, রেজাউল করিম পলাতক রয়েছেন।
আদালতের এ রায়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম ইয়াহইয়া চৌধুরী সন্তুস্টি প্রকাশ করলেও হতবাক হয়েছেন মামলার বাদী নুর উদ্দিন এবং তার আইনজীবীরা।
বাদি নুর উদ্দিন বলেন, প্রধান আসামিসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বেখছুর খালাস দেওয়া হয়ছে। আইনজীবীদের মাধ্যমে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে শিঘ্রই আপিল করা হবে।
রায়ের সত্যতা জানিয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান আফজাল বলেন, আদালতের এই রায়ে তারা হতবাক হয়েছেন। কারণ ডবল মার্ডারের ঘটনায় একজনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় কোন বিধানে। সেজন্য বাদী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানান তারা।