সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকসহ চার উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম হাওর দেখার হাওর। দেখার হাওরকে বলা হয় বোরো ফসলের শস্য ভাণ্ডার। দেখার হাওরে রয়েছে ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। চলতি বছর শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর অংশের উথারিয়া বাঁধের বিপজ্জনক বাঁধ খ্যাত মূল ক্লোজার এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলা দেখার হাওরের উথারিয়া বাঁধের মূল ক্লোজার ৪৪নং পিআইসি’র অধীনে। পিআইসি কমিটির সভাপতি রাজা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আতাবুর রহমান দেখার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের সময়সীমা গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট ৭৪ দিন সময় থাকলেও ইতিমধ্যে ৪৮ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রভাবশালী মৎস্যজীবী, জনপ্রতিনিধিদের চাপে পিআইসি কমিটির লোকজন মূল ক্লোজারে কাজ করতে পারছেন না। বাঁধের মূল ক্লোজার ৪৪নং পিআইসি’র অধীনে ১২০ মিটার অংশের দুই পাশে কাজ শুরু হলেও উথারিয়া বাঁধের মূল ক্লোজারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দেখার হাওরের ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি হুমকির মুখে রয়েছে। গতকাল সকালে সরজমিন দেখার হাওরের বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের পিআইসি বড় বড় ড্রাম ট্রাক দিয়া বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে বাঁশের মাচা তৈরি করে মাটি ফেলা হচ্ছে। তবে দেখার হাওরের উথারিয়া বাঁধের বিপজ্জনক বাঁধ খ্যাত মূল ক্লোজার এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে।
দেখার হাওরের কৃষক সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল লতিফ জানান, শান্তিগঞ্জ উপজেলার উথারিয়া ক্লোজার এই হাওরের ডেঞ্জার পয়েন্ট। এই ক্লোজার অরক্ষিত রেখে পুরো হাওরে কাজ করলে কোনো লাভ হবে না। আগাম বন্যা আসলে বোর ফসল ঘরে তুলতে পারবো না। আমরা অনেক শঙ্কায় আছি। প্রতি ৩ বছর পর পরই এই অঞ্চলে একবার আগাম বন্যা আসে। বিগত ৩ বছর আমরা ভাল ভাবে ফসল উঠিয়েছি। এ বছরটা কৃষকদের জন্য দুর্যোগের বছর মনে হচ্ছে।
পিআইসি কমিটির সভাপতি রাজা মিয়া জানান, দেখার হাওরের মূল ক্লোজারে কাজ করতে পারছি না। কিছু প্রভাবশালী মৎস্যজীবীরা আমাদেরকে উথারিয়ার মূল ক্লোজারে মাটিতে ফেলতে দিচ্ছেন না। তাদের জলমহালের পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে মুল ক্লোজারটি বন্ধ করতে পারছি না। গত কাল থেকে তাদের জলমহালের পানি ছাড়া শুরু করেছে। এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে আমার পিআইসি’র দুই পাড়ে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দুই অংশে ড্রেসিং ও দুর্মুচ মারার কাজ শুরু হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছিন খাঁন বলেন, দেখার হাওরের উথারিয়া বাঁধের মূল ক্লোজারটি দেখার হাওরের ভেতরে অবস্থিত জলমহালের পানি নিষ্কাশনের জন্য রাখা হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উথারিয়া ক্লোজারটি বন্ধ করা হবে। না হলে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, উথারিয়া ক্লোজার দিয়ে হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ক্লোজারটি খোলা রাখা হয়েছে। তবে দুই পাশে কাজ চলমান রয়েছে। হাওরের পানি নেমে গেলেই উথারিয়া ক্লোজারটি বন্ধ করে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হবে।