সিলেটে নারীর ছদ্মবেশে থাকা যুবক তুষার আহমদ (২০) কে হত্যার অভিযোগে তৃতীয় লিঙ্গের ৬ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তুষারের ভাই হিমেল আহমদ রাফি। তার মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার তৃতীয় লিঙ্গের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ছােটদেশ গ্রামের মৃত মনাই মিয়ার সন্তান হৃদয় (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার মৃত সিদ্দিক মিয়ার সন্তান তানহা (২৫), সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার হােসেনপুর গ্রামের মৃত এমরাজুল হকের সন্তান সুমি উজ্জল (১৮), হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার পাঁচগাঁও গ্রামের মৃত কনাই মিয়ার সন্তান চাঁদনী সজল (৩০), পাপ্পু পাপিয়া ও হৃদয় রুপা।
এর মধ্যে পাপ্পু পাপিয়া ও হৃদয় রুপা ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন- আমরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করি। প্রথমকে চারজনকে গ্রেপ্তার করি, তাদের দেওয়া তথ্যমতে পরিকল্পনাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি জানান- প্রথমে গ্রেপ্তার করা ৪ জন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে আমাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের সোমবার বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের মঙ্গলবার আদালতে প্রেরণ করা হবে।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে সােবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির খবরের ভিত্তিতে সিলেট মহানগরীর সােবহানীঘাটস্থ বনফুল এন্ড কোম্পানির দোকানের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির সামনে (নিচ তলায়) থেকে তুষারের মৃতদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। খবর পেয়ে তুষারের মা নাছিমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। ময়না তদন্ত শেষে রবিবার বিকালে নগরীর মানিকপীর টিলায় তুষারের লাশ দাফন করা হয়।
মৃতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়- তুষার নিজেকে ৩য় লিঙ্গের মানুষ পরিচয় দিতেন এবং সেই বেশে থাকতে পছন্দ করতেন। প্রাথামিকভাবে আমরা ধারণা করছি এটি একটি হত্যাকাণ্ড। কারণ তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে রবিবার তুষারের ভাই হিমেল আহমদ রাফি বলেন- আমরা ভাই তৃতীয় লিঙ্গের নয়। ছোটবেলায় একসঙ্গে আমাদের খতনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাসদবির প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় সে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকে এবং একসময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে থাকে।
তিনি আরও বলেন- প্রায় প্রতিদিন রাতই তুষার তার তৃতীয়লিঙ্গের বন্ধুদের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফিরে পরদিন সকালে। এ ব্যাপারে তাকে বার বার নিষেধ করেও কথা মানানো যায়নি।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকেও এভাবে তার এক তৃতীয় লিঙ্গের বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে আর ঘরে ফেরেনি তুষার। সকালেই জানতে পারি তার লাশ সোবহানীঘাটের ওই জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।