প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই তেলের দাম বেড়েছে। অনেক দেশেই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে উপকরণ দরকার আন্তর্জাতিক বাজারে সেগুলোর দাম অত্যাধিক বেড়েছে।
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদরদফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পচাত্তর সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে যাদের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী কর্মকাণ্ডের জন্য বিচারকার্য শুরু হয়েছিল তাদেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো হয়। তাছাড়া যারা জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তৎকালীন সরকার ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত পর্যন্ত করে।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার কারণেই সেনাবাহিনীতে ১৯ বারের মতো ক্যু হয় এবং বহু সেনা সদস্য, সৈনিক, অফিসার মৃত্যুবরণ করেন। এমন একটা সময় ছিল যে অফিসারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা করা হয়েছে। অনেকের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে, পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। এ রকমও ঘটনা তখন ঘটতেই থাকতো। প্রতিরাতে বাংলাদেশে কারফিউ চলতো। মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। এরকম একটা পরিবেশ বাংলাদেশে ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পচাত্তরে আমি আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। ৮১সালে আমাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। অনেকটা জোর করেই দেশে ফিরেছিলাম। যেখানে খুনি ও অপরাধীদের রাজত্ব। আমি জানতাম যেকোনো সময় আমাকে মারতে পারে। কিন্তু আমি সেটা পরোয়া করিনি। মানুষের জন্য ফিরে আসি। ফিরে আসার পর থেকে আমার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব দেশে আমার বাবার নিজের হাতে গড়ে তোলা সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীকে আরও উন্নত করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার একটা অভিঘাত তার ওপরে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। যার ফলে আজকে সমগ্রবিশ্বেই তেলের দাম বেড়েছে, অনেক দেশেই এখন বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে উপকরণ দরকার সেগুলোর দাম অনেক বেড়েছে। যেমন— ডিজেল, তেলে, এনএলজির দাম বেড়েছে। এর ফলে প্রায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। কয়লা এখন পাওয়া যায় না।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পরিবহন খাতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আগের মতো জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। শুধু আমাদের দেশে না প্রত্যেকটা দেশেই এখন এসব জিনিসের ঘাটতি। সেখানে আমরা যদি একটু সাশ্রয়ী বা মিতব্যয়ী হই, নিজেরা নিজেদের সঞ্চয়টা বাড়াতে পারি তাহলে যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করা যাবে। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারেই যদি সঞ্চয়মুখী হয় তাহলে আমরা নিজেরা কিছু করতে পারবো।
তিনি বলেন, অনেক উন্নত দেশে কিন্তু দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশের যাতে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাধার যেন খালি না থাকে। যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, যতটুকু খালি জায়গা সেখানে কিছু না কিছু উৎপাদন করবেন। অন্তত নিজেদের খাদ্যটা নিজেরা জোগাড় করার চেষ্টা করবেন, যাতে বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। উদ্বৃত্ত থাকলে বিক্রি করে যাতে লাভবান হতে পারেন সেই ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে।
এখন আবার একটু পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেইসঙ্গে আমরা টিকা দিচ্ছি। টিকা দেওয়ার সঙ্গে বুস্টার ডোজটাও নিতে হবে। অনেকেই বুস্টার ডোজ নিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান নিয়েছে কিন্তু সাধারণ জনগণ একটু পিছিয়ে থাকে। সেই ব্যাপারেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো, যাতে প্রত্যেকে বুস্টার ডোজ নেয়। যাতে এ পাদুর্ভাব বাড়তে না পারে।