ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কড়াইল বস্তির আগুন: খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে কয়েকশ পরিবারের

বায়ান্ন ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৩:১৬:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে সর্বস্ব হারানো কয়েকশ পরিবারের রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে। তিল তিল করে সাজানো সংসার আবার কীভাবে গড়বেন জানেন না সমাজের নিম্ন আয়ের এসব মানুষরা।

 

রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে কড়াইল বস্তির একটি অংশে।  আগুনে পুড়ে যায় কয়েকশ টিন-কাঠের ঘর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে সময় কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের।

 

রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া কড়াইল বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে পোড়া স্তূপ। সকালেও যেখানে টিন-কাঠের তৈরি দুই তলা, তিন তলা ঘর ছিল, তার সবই এখন ছাইয়ে পরিণত।

 

ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের পুড়ে যাওয়া ঘর থেকে অবশিষ্ট কিছু আছে কিনা সেটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কেউবা আবার আহাজারি করছেন। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে নির্বাক বসে আছেন।

 

কড়াইল বস্তিতে দুটি ঘর ছিল ক্লিনারের কাজ করা আলা-উদ্দিনের। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সাজানো সংসার ছিল তার। আগুনে সেই সাজানো সংসারের সব পুড়ে গেছে। বের করতে পারেননি এক টুকরো সুতাও।

 

আলা-উদ্দিন বলেন, আগুনে সব পুড়ে গেছে। একটি সুতাও বের করতে পারিনি। পরনে যা ছিল, তাই এখন সম্বল। এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

 

সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্যই পাননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় পাশের একটি মসজিদে মুড়ি-বুট দিয়ে ইফতার করছি। কেউ কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি। আমাদের দিকে কেউ দেখে না। রাতে সেহরি করবো কেমনে জানি না।

 

নিজের পোড়া ঘরের ছাইয়ের পাশে বসে ছিলেন বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করা ৪০ বছরের নারী জুলেখা। তিনি বলেন, আমার তিনটি রুম ছিল। আমার স্বামী নেই। দুই ছেলে ও তাদের বউদের নিয়ে এখানে থাকতাম। যখন আগুন লাগে তখন আমি কাজে ছিলাম। ছেলে বউয়ের ফোনকল পেয়ে ছুটে আসছি। কিন্তু কিছুই বের করতে পারিনি। এ রোজার দিনে একটু ইফতার করারও সামর্থ্য এখন আমার নেই। কিছুক্ষণ আগে একজন একটা কেক দিয়ে গেছে। সেটা খাইছি। সেহরি কী দিয়ে করবো জানি না।

 

ভুক্তভোগীদের মতে প্রায় ৩০০ ঘর পুড়ে গেছে আগুনে। এসব ঘরের বেশিরভাগই ছিল দোতলা-তিনতলা। যেখানে প্রায় চার শতাধিক পরিবার বাস করতো।

 

রাতে বস্তি এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে দেখা যায়। তবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। তাদের ধারণা প্রায় ২৫০ পরিবার আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন। তবে সঠিক তথ্য তালিকা করার পরই বলতে পারবেন বলে জানান তারা।