খাবারের লোভ দেখিয়ে এক প্রতিবন্ধী শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন জাহিদুল ইসলাম(৪০)। ধর্ষণের পরে কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকিও দেন ওই ধর্ষক। তবে শিশুটি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় জেনে যায় বাড়ির সকলে। ধর্ষণের বিচারের জন্য থানায় মামলা করতে চাইলেই নানান ধরণের হুমকি পেতে হয় অসহায় পরিবারটিকে। স্থানীয়রা বলছেন, ওই ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার না হলে দিন দিন বাড়বে ধর্ষণের সংখ্যা।
জানা গেছে, নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সুইচগেট খলিছাপাচা এলাকার মৃত কছির উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম। এর আগেও গরু চুরি মামলায় জেল খেটেছিলো। চুরি মামলার গন্ধ না যেতেই এবার উঠেছে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষনের অভিযোগ। গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিবন্ধী শিশুটি টয়লেট যায় ,টয়লেট বের হতেই ডাকেন খাবার দেয়ার কথা বলে,ডাক না শুনলে জোর করে মুখ চেপে ধরে নিয়ে একটি ঘরে। এর পর ধর্ষণ করে। কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ধর্ষক জাহিদুল। ভয়ে কাউকে না বলতে চাইলেও রাতে শরীর ব্যথায় কাতরাচ্ছিল ভুক্তভোগী শিশুটি। সে সময়ে ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারে পরিবারের লোকজন। ধর্ষনের বিচারের দাবীতে থানায় মামলা করতে চাইলে ধর্ষক নানান ভয়-ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে রাখে অসহায় পরিবারটিকে। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লজ্জায় একঘরে হয়ে পরে আছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
ভুক্তভোগী শিশুটি বলেন, আমি টয়লেটে গিয়েছিলাম। ওদিকে একটু অন্ধকার ছিলো। টয়লেট থেকে বের হয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। এমন সময় জাহিদুল এসে আমাকে বলে চলো তোমার জন্য অনেক খাবার এনেছি, চলো খাবে। আমি যেতে না চাইলে আমাকে জোর করে মুখ চেপে ধরে বাঁশঝারের পাশে একটি ঘরে নিয়ে যায়। তারপর আমার সর্বনাশ করে। আমি চিৎকারের চেষ্টা করছিলাম কিন্তু আমার মুখ চিপে ধরেছিলো। এজন্য কেউ শুনতে পায়নি। কিন্তু আমাকে বলছে আমি যদি কাউকে বলি তাহলে আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলবে। এজন্য বাড়িতে এসে কাউকে বলি নাই। কিন্তু রাতে শরীরটা খুব ব্যথা করছিলো। তখন সবাই আমার কাছে জানতে চায় কি হয়েছে? তখন আমি বলছি জাহিদুল আমার সর্বনাশ করেছে।
প্রতিবেশী মাহমুদা আক্তার বলেন, কিছু দিন আগে গরু চুরি করে জেল খেটেছিলো জাহিদুল। এবার প্রতিবন্ধি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। এই ধর্ষকের যদি বিচার না হয়, তাহলে সে আমাদেরও ক্ষতি করতে পারে। আমরা এই ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবী করছি।
৬০ বছর বয়সী প্রতিবেশী কসিম উদ্দিন বলেন, একটা প্রতিবন্ধী মেয়েকে যে ব্যক্তি ধর্ষণ করতে পারে। এর উপযুক্ত বিচার না হলে দিন দিন বাড়বে অপরাধের সংখ্যা। এই কিছু দিন আগে সে গরু চুরির জন্য জেল খাটলো। তার অন্তরে তো কোন ভয় নাই। সে আবার অসহায়টি পরিবারটিকে নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসীরা প্রশাসনের কাছে ধর্ষণের উপযুক্ত বিচার দাবী করছি।
শিশুটির বাবা বলেন, আমরা জানার পরে থানায় মামলা করতে যাবো। এমতাবস্তায় জাহিদুল আমাদের বাড়িতে এসে নানান ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে গেছে। আমরা কি এই অসহায় শিশুটির ধর্ষণের বিচার পাবো না। এলাকার লোকজনের কথায় লজ্জায় বাহিরে বের হতে পারছি না। আমি প্রশাসন ও সরকারের কাছে ওই ধর্ষকের উপযুক্ত বিচার দাবী করছি।
৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলিয়ার বলেন, আমি ধর্ষণের ঘটনাটি জেনেছি। তবে অনেকেই মিমাংসার জন্য বলেছিলো। কিন্তু আমি বলছি এই ধরণের ঘটনার মিমাংসা হয় না। ভুক্তভোগী পরিবারটিকে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শও দিয়েছি। ধর্ষক যে হউক না কেনো তার বিচার হওয়া দরকার।
পশাবাড়ী ইউপি চেয়াম্যান ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, ধর্ষণের কোন মিমাংসা নাই। ধর্ষকের বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। যে কোন প্রভাবশালী হোক না কেন বিচার না হলে সমাজে দিন দিন বাড়বে ধর্ষণের সংখ্যা। আমরা চাই এই ধর্ষকের বিচার করা হউক। তবে আমি জানতে পেরেছি কিছু অসাধু মহল ঘটনাটির মিমাংসা করতে চাচ্ছে। আমি তাদেরকে থানায় মামলা দেয়ার জন্য অবগত করেছি।
মুঠো ফোনে ধর্ষক জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে ধর্ষণের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমরা এটা মিমাংসা করবো। আর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কোন লাভ হবে না। আমি তার পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তারা মিমাংসা করবে। এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউপকে কল দিলেও কল রিসিভ করেননি।