ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

গোয়াইনঘাটে মুক্তিপণ না দেয়ায় রাজুকে হত্যা

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৪:২৩:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেটের গোয়াইনঘাটে হাত-পা বাধা অবস্থায় একটি লাশ পাওয়া গেছে। শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় সীমান্তবর্তী একটি টিলায়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে জাফলং সংগ্রামপুঞ্জি বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় পাঁচশত গজ পূর্বে একটি টিলা সংলগ্ন জমি থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, মোবাইল ফোনে পরিচয়, চ্যাটিং অত:পর জাফলংয়ে এনে মুক্তিপণ চেয়ে না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের শিকার ব্যক্তির নাম কাউছার আহমদ রাজু। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কালাম বহরপুর গ্রামের আব্দুল বাছিদের ছেলে। ঘাতকের নাম শামছুল ইসলাম। সে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার দাদনচক মিয়াপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। সে একজন চিহ্নিত প্রতারক ও দাগী অপরাধী।

ঘাতক শামছুল চলতি মাসের ৯ তারিখে জাফলং মামার বাজারস্থ হোটেল মেঘালয়ে সরকারি একটি বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অবস্থান করে। ঘাতক শামছুলের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি কম্পিউটার হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়। সে নিহত কাউছার আহমদ রাজুর সাথে মোবাইল ফোনে ফেইক আইডি থেকে মেয়ে পরিচয়ে চ্যাটিং করে।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাফলং মামার বাজারস্থ হোটেল মেঘালয়ে নিয়ে আসে। এখানে আসার পর হোটেল কক্ষে মেয়ে পরিচয়দাতা ব্যক্তি মেয়ে নয় জেনে প্রতিবাদ করলে ঘাতক শামছুল তাকে মারপিট করে। পরে রাত ৯ টা থেকে ১০টার দিকে ফিল্মি স্ট্যাইলে হোটেল থেকে ভিকটিম কাউছার আহমদ রাজুকে একটি ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় করে সংগ্রাম বিজিবি ফাড়ির অদূরে একটি টিলায় নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর সে আবারও মামার দোকান মেঘালয় হোটেলে অবস্থান করে।

এদিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় একটি লাশ পড়ে থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ, থানা অফিসার ইনচার্জ কে.এম. নজরুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর তদন্ত ওমর ফারুক মোড়লসহ পুলিশ সদস্যরা। এ সময় নিহত ব্যক্তির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সুরুতহাল সহ লাশ উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ফোন সূত্রে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। একাধিক সূত্র ও তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে লাশ উদ্ধারের ২ ঘন্টার ভিতরেই ঘটনায় জড়িত ঘাতক শামছুল ইসলামকে হোটেল মেঘালয় থেকে গ্রেফতারে সক্ষম হয় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।

এদিকে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, ধৃত শামছুল একজন পেশাদার অপরাধী এবং আইটি এক্সপার্ট। চলতি মাসের ৯ তারিখে সে জাফলংয়ের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়ে এলাকায় একটি বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অবস্থান নেয়। ধৃত অপরাধী মোবাইল ফোনে নিহতের সাথে ফেইক আইডি দিয়ে পরিচয় এবং তাকে জাফলং এনে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিল। টাকা এবং তার কথা মত না চলার কারণে ফিল্মি স্ট্যাইলে জিম্মি করে হোটেল রুম থেকে ভিকটিমকে ১টি ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় করে সীমান্ত এলাকায় একটি পাহাড়ে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতীয়মান হয়েছে। ধৃত শামছুল একজন পেশাদার ও দাগী অপরাধী। তার ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তার কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি কম্পিউটার হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরও জড়িত আছে কি না তা তদন্তাধীন রয়েছে। এদিকে নিহতের লাশ উদ্ধার পরবর্তী ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেলে কলেজে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, অপরাধ দমনে পুলিশ সব সময় জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। এই হত্যাকান্ডে লাশ উদ্ধারের ২ ঘন্টার ভেতরেই ঘাতককে ঘাতককে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।