ঢাকা, শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বিদেশি সিগারেটে সয়লাব বাজার

মো. এনামুল হক লিটন, চট্টগ্রাম | প্রকাশের সময় : সোমবার ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:০০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

চট্টগ্রামে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশী সিগারেট। বাংলাদেশের বাজারে এসব সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও চট্টগ্রামের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে বিদেশী সিগারেটে।

জানা গেছে, অসত্য ঘোষনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম বন্দরসহ আরও বিভিন্ন চোরাই পথে বড় বড় চালান আনছে। যা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারাদেশে। ফলে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র, সরকার।

অভিযোগ রয়েছে, মাঝেমধ্যে কিছু কিছু চালান আটক হলেও থেমে নেই বিদেশী সিগারেটের আমদানি। চট্টগ্রামের পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দেদারছে মিলছে বিদেশী ব্রান্ডের ‘অরিস সিলভার, মন্ড ও মেগা’ সিগারেট।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি কারখানার নামে থাইল্যান্ড থেকে আসা চালানটিতে ৭৪০ কার্টুনে ৭৪ হাজার শলাকার সংযুক্ত আরব আমিরাতের ল্যামের ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া গেছে। যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দেড় কোটি। এর বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ ৯ কোটি বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

রোববার রাতে চালান আটকের বিষয়টি দৈনিক বায়ান্নকে নিশ্চিত করেছেন, কাস্টম হাউসের এক ডেপুটি কমিশনার।

কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, কাস্টম হাউসের কমিশনারের কাছে আসা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিস্ক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা রপ্তানিকারকের ওয়েবসাইট, উৎস দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসার ধরন ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা বিশ্লেষণ করে এ চালানে অসত্য ঘোষণার পণ্য থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়।

পরে রোববার বিকেল ৩টার দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় কনটেইনারটি ফোর্স কিপ ডাউন করে কায়িক পরীক্ষা শুরু করে এআইআর টিম। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দর সিকিউরিটি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্ট ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

কাস্টম হাউসের এক ডেপুটি কমিশনার জানান, কায়িক পরীক্ষায় ওই কনটেইনারে ৭৪০ কার্টনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তৈরি ল্যামের ব্র্যান্ডের ন্যানো সিলভার, গ্রে, ব্লু-এবং হোয়াইট ফ্লেভারের ৭৪ হাজার শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়।

চালানের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে কাস্টমস আইন ২০২৩ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি অনুযায়ী কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছেন কাস্টম হাউসের কমিশনার।

এর আগে এআইআর টিম গত ৫ সেপ্টেম্বর ফেব্রিক ঘোষণায় ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ এবং গত ২৭ জুন ওয়াটার ফিউরিফাইয়ার মেশিন ঘোষণায় ৫০ হাজার শলাকা সিগারেট আটক করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের এক সিগারেট বিক্রেতা জানান, বিদেশী সিগারেট বিক্রিতে লাভ দ্বিগুন। তরুণরা এ সিগারেটের প্রধান ক্রেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিয়াজ উদ্দিন বাজার পান মার্কেটের এক আমদানিকারক জানান, অসত্য ঘোষণায় বন্দর দিয়ে সিগারেট আমদানি করি। পরে সিগারেটগুলো পাইকারী দামে বিক্রি করি। সারাদেশে আমাদের গ্রাহক আছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় অরিস সিলভার, মন্ড, মেগা, জেট, পিকক, ক্লাসিক, প্যারিস সিগারেট।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার মো. রাজিব হোসেন বলেন, গত রোববার বড় একটি চালান আটক করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ৭৪ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল দেড় কোটি, এর বিপরীতে রাজস্বের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। এতে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ৯ কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন এখানে ঢালাওভাবে চালান আসার কোনো সুযোগ নাই। কারণ আমাদের নজরদারিতে যখন আসে তখনই আমরা চালান আটক করি।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে