মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক কমিটি বিলুপ্তের জেরে বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। রবিবার ছাত্রলীগের দুইগ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানে পৌরশহরে উত্তেজনা বিরাজ করে। আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পুলিশ ছাত্রলীগের উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়। তবে ছাত্রলীগের একাংশের অভিযোগ, বিকেলে তারা পৌরশহরে একটি আনন্দ মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আহতও হন। এ নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।
থানা পুলিশ, স্থানীয় ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমীরুল হোসেন চৌধুরী আমীন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বড়লেখা উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারির ২০২৪ইং, মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ বরাবরে পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এদিকে, কমিটি বিলুপ্তির প্রতিবাদে শুক্রবার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং, বিকেলে বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে বড়লেখা উপজেলা, পৌর ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ পৌর শহরের উত্তর বাজারের ডাকবাংলো এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সভা করেন।
অন্যদিকে রবিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইং, বিকেলে ছাত্রলীগের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি’ বিলুপ্ত করায় জেলা ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানিয়ে বড়লেখা পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে থেকে সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (বিলুপ্ত কমিটি) তাওহিদুল ইসলাম ফরহাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ আনন্দ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়। এসময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে তা প্রতিহত করতে উপজেলা ছাত্রলীগের (বিলুপ্ত কমিটি) অপর গ্রুপ পৌরশহরের ডাকবাংলো এলাকায় পাল্টা অবস্থান নেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপংকর ঘোষ ও বড়লেখা থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী ছাত্রলীগের দু’গ্রুপকে বুঝিয়ে শহর থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। তখন মিছিল শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে (তাওহিদুল ইসলাম ফরহাদের গ্রুপের) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি-বাকবিতন্ডা ঘটে।
মিছিলে বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আছকির আলী, সাবেক উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক সামছুল ইসলাম টুকু, পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেহান পারভেজ রিপন অংশ নেন।
পরে মিছিল করতে না পেরে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কটুক্তির প্রতিবাদে পিসি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (বিলুপ্ত কমিটি) তাওহিদুল ইসলাম ফরহাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর।
অপরদিকে বড়লেখা পৌরশহরের ডাকবাংলো এলাকায় বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের (বিলুপ্ত কমিটি) সভাপতি ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বড়লেখা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছালেহ আহমদ জুয়েল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বড়লেখা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জালাল আহমদ, বড়লেখা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমদ, বড়লেখা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ময়নুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সুমন আহমদ, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাকের আহমদ ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আলী হোসেন, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
কলেজ ছাত্রলীগের (বিলুপ্ত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক তাওহিদুল ইসলাম ফরহাদ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলের আয়োজন করেছিলাম। মূলত উপজেলা, পৌর ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি’ বিলুপ্ত করায় জেলা ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে কটুক্তির প্রতিবাদে মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করি। মিছিল চলাকালে পুলিশ আমাদের বাধা দিয়েছে, আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে এবং আটকের চেষ্টা চালিয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজনের হাত কেটে গেছে। কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের (বিলুপ্ত কমিটি) সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই কালো টাকার বিনিময়ে জেলা ছাত্রলীগ বড়লেখা উপজেলা, পৌর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে। মূলত একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে জেলা ছাত্রলীগ সুসংগঠিত বড়লেখা ছাত্রলীগকে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিলুপ্ত করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি।
থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ শহরের পৃথক দুটি স্থানে অবস্থান নিয়েছিল। এতে উয়ভগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুইগ্রুপ মুখোমুখি হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারত। তাই আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় দুইগ্রুপকে বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। লাঠিচার্জের কোনো ঘটনা ঘটেনি।