ঢাকা, সোমবার ৬ মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে মিলছে না জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিভেনম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:৩৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
পুকুর-ডোবা-নদী-খাল-বাওড়ের জেলা ঝিনাইদহ। তাই বর্ষকাল আসলেই সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই সাপে কামড়ানো রোগী আসছে হাসপাতালে। কিন্তু সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপের বিষের প্রতিষেধক না থাকায় চরম জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে এ জেলার মানুষ।
 
রোগীর স্বজনদের দাবি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিষধর সাপে কেটে বহু মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
জানা যায়, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পায়রাডাঙা গ্রামে বাপ্পি নামে এক ছেলে সাপে কাটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে। সাপে কাটার পর সু-চিকিৎসার আশায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। তবে হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না থাকায় স্বজনদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে। পরে অন্য জেলা থেকে অ্যান্টিভেনম এনে বাপ্পির জীবন বাঁচায় তার পরিবার।
 
এর আগে গত মঙ্গলবার একই দিনে জেলার শৈলকুপা উপজেলার দিঘল গ্রামের তাবাচ্ছুম তমা (৬) এবং হরিণাকুন্ডু উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের সিনথিয়া (৫) নামের দুই শিশু সাপে কেটে মারা গেছে।
 
স্বজনদের অভিযোগ, তমা সঠিক সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছায়। কিন্তু অ্যান্টিভেনম না থাকায় তাকে ফরিদপুর রেফার্ড করা হয়। রাস্তায় তার মৃত্যু হয়। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
 
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সামনে ওষুধ বিক্রেতা আল-হেরা ফার্মেসির মালিক এস এম মসলেম উদ্দীন জানান, জেলার কোথাও জীবণ রক্ষাকারী এ প্রতিষেধকের সাপ্লাই নেই। সাধারণ মানুষ যে হাসপাতালের বাইরে থেকে এ প্রতিষেধক কিনবে তারও কোনো উপায় নেই।
 
তার মতো অন্যান্য ওষুধ বিক্রেতাদের অভিযোগ, অ্যান্টিভেনমের সাপ্লাই নেই প্রায় ১ মাসের অধিক সময় ধরে।
 
এদিকে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এ বছর সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪০ জন। এবছর বিভিন্ন সময় ৪ জন মারা গেলেও অভিযোগ আছে অ্যান্টিভেনম না পাওয়ায় মারা গেছে ২ জন।
 
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু জানান, এ সময়ে জীবন রক্ষাকারী এ ওষুধের সংকট কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে কারো কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানাই। যদি হাসপাতাল আমাদের জানায়, তবে অবশ্যই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমরা এর একটা না একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করার চেষ্টা করবো।
 
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গত এক মাস ধরে অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই বন্ধ ছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনটি ডোজ পাওয়া গেছে। বর্তমানে অ্যান্টিভেনম সাপ্লাই খুবই কম। 
 
অ্যান্টিভেনমের জন্য সিভিল সার্জনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হয়। তারপর তারা প্রস্তাবনা দিলে ঢাকা থেকে এই ওষুধগুলো আসে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার।
 
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম করণে কোনো রোগী মারা যায়নি। গত বছর একজন মারা গিয়েছিল। তবে বর্তমানে বাইরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে ১৫ হাজার টাকায় অ্যান্টিভেনম কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
 
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, গত ১ মাস সদর হাসপাতাল ও শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে ১৫ ডোজ অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।