ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঝুলে আছে ড্যাপের গেজেট, জলাশয় ভরাট অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৮ জুন ২০২২ ০৩:৫০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

রাজধানীর জলাধার ও জলাশয় সংরক্ষণে ঢাকা মহানগরীর মহাপরিকল্পনা, ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এবং জলাধার সংরক্ষণ আইনে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বলা হয়েছে, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে এসব জলাশয় ও জলাধার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নগরীর সৌন্দর্যও বাড়ায়। এ কারণে এগুলো ভরাট করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

দেশে প্রচলিত আইনে এমন নির্দেশনা থাকলেও খোদ সরকারের দুই সংস্থা, বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তা মানছে না। নিজেদের বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করছে তারা। এ নিয়ে সরকারের তদারক সংস্থাগুলোরও তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, নগর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই জলাশয়-জলাধার ভরাট হচ্ছে। এতে টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়তে ঢাকা কেন ব্যর্থ, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখন ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে এবং জলাশয়-জলাধার রক্ষায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে ঢাকাকে আর কোনোভাবেই বাঁচানো যাবে না।

এদিকে ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) গেজেট চূড়ান্ত হয়েছে। ছয়মাস আগে সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো অনুমোদন পায়নি। এরই মধ্যে ড্যাপে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জলাশয় বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে

রাজধানীর কুড়িল উড়াল সড়ক সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ১ দশমিক ৮৪ একর আয়তনের একটি জলাধার রয়েছে। কয়েক বছর আগে এই জলাধারের জায়গাটি বহুতল হোটেল নির্মাণে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয় সংস্থাটি। সে অনুযায়ী গত জানুয়ারিতে বালি-মাটি ফেলে ভরাট শুরু হয়। এর প্রতিবাদে ২৭ জানুয়ারি কুড়িলে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তার নির্দেশে ওই জায়গায় থাকা হোটেলের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড অপসারণ করে ডিএনসিসি। পরে জলাশয়ের বরাদ্দ দেওয়া ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন রেলওয়ে মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার।

তিনি বলেন, কুড়িলের ওই জায়গাটি রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তু এটি ঢাকা মহানগরীর মহাপরিকল্পনা, ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ), জলাধার সংরক্ষণ আইনে জলাশয় হিসেবে উল্লেখ ছিল। এটা রেলওয়ের জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িল উড়াল সেতু ঘিরে চারপাশে আট থেকে দশটি জলাশয় রয়েছে। ওই এলাকায় ভারি বর্ষণ হলে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে সব জলাশয়ে গিয়ে জমে। ফলে সড়কে জলাবদ্ধতা হয় না। এসব জলাশয়ের কারণে ওই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শহরের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

কুড়িলের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, কুড়িলে জলাশয়গুলো থাকায় এই এলাকায় কখনোই জলাবদ্ধতা হয়নি। লেকের মতো দেখতে এসব জলাশয় এলাকায় সকাল-বিকেল মহল্লার অনেকেই হাঁটতে যায়। সবার মনে প্রশান্তি কাজ করে।