ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১
নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা

টাঙ্গাইলে আমন ধান চাষ থেকে বঞ্চিত কৃষকরা

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৩৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আমন মৌসুমে উঁচু জমিতে ধান চাষাবাদ করা গেলেও বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় নিচু জমিতে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হয় না। আর এইসব জমি অনাবাদি থাকায় যত্রতত্র জন্মে কচুরিপানাসহ নানা জাতের আগাছা। ফলে প্রতি বছরই অনাবাদি থেকে যায় শতশত একর ফসলি জমি। জমিগুলো থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমন ধান চাষ থেকে বঞ্চিত হতে হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জমিগুলো কয়েক মাস জলাবদ্ধতা থাকার পর এখন পানি নেমে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে কচুরিপানাসহ বহু জাতের আগাছা। বীজতলা ও আগাম বোরো ধান রোপনের লক্ষে এসব অনাবাদি জমিতে জন্মানো আগাছা অপসারণ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকরা। তবে এসব আগাছাই প্রধান গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগাছা পরিষ্কার করতে কৃষকের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নিকরাইল খালপাড় এলাকা, কয়েড়া ধোপাচড়া বিল, আমুলাদহ বিল, বিলচাপড়া বিল, রুহুলী বিল, বিল কয়া, নিকলা বিল, তারাই বিল, মাছিহাটা পাড়া বিল, আনার খাঁ পাড়া বিল, পাঁচতেরিল্ল্যা বিলসহ অসংখ্য ছোট-বড় বিলে কচুরিপানাসহ নানা জাতের ঘাসে ছয়লাভ হয়ে আছে। বর্তমানে জমিগুলোর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কৃষকরা। সে আগাছা পচনের লক্ষ্যে জমিতেই আগাছার স্তুব করে রাখা হয়েছে।

কৃষকরা জানায়, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির আগাছা পরিষ্কার করতে খরচ হচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এসব জমিতে একবারই ধান চাষ করা হয়। জমিতে পানি প্রবেশ করে ঠিকই কিন্তু বের হয় না। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা খালগুলো মাটি ভরাট করে রাখায় পানি নিষ্কাশন হয় না। এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা। এসব জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে শতশত একর জমি অনাবাদি থাকতো না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা জরুরি।  

কৃষক শাহজাহান মন্ডল বলেন, আমন মৌসুমে অথৈই পানি থাকে। তখন ধান চাষ করতে পারি না। ফলে পানিতে কচুরিপানাসহ নানা জাতের ঘাস জন্মে চট পড়ে যায়। আগাছা দমনে আগাছা কীটনাশক ব্যবহার করেও কোন কাজ হয় না। এখন পানি শুকিয়ে গেছে। বীজতলা ও আগাম বোরো ধান রোপনের সময়। তাই অনেক কষ্টে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে নেমেছি। এছাড়া অতিরিক্ত খরচ লাগছে। শ্রমিকের মজুরিও বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে।

আরেক কৃষক রাশেদ আলী বলেন, ঘাস ও কচুরিপানায় পায়ে কাঁদাও লাগে না। ঘাসের চট লেগে গেছে। ৩০ শতাংশ জমি চার দিন ধরে পরিষ্কার করছি। কিন্তু এখনো শেষ করতে পারেনি। আরও দু’দিন সময় লাগবে। বন্যা ও টানা বৃষ্টির পানির কারণে জলাবদ্ধতায় এমনটা হয়। পানি নিষ্কাশনে কোন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে অনাবাদি থেকে যায় শতশত একর জমি জন্ম নেয় বিভিন্ন ধরণের আগাছা। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির জানান, বন্যা ও টানা বৃষ্টির ফলে এ উপজেলায় অসংখ্য জমি অনাবাদি থেকে যায়। এতে করে সেসব জমিতে কচুরিপানাসহ জন্মে বিভিন্ন আগাছা। এসব আগাছা পরিষ্কার করে জমিতেই স্তুব করে পচিয়ে ফেলতে পারলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। জমিতে বীজতলা বোরো চাষ রোপনের জন্য কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেয়া এবং জমিতে আগাছা কীটনাশক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।