সিলেটের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে প্রিয়মুখ মো. শাহজাহান আলী। ১৯৯২ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি দিয়ে শুরু হয় ছাত্র রাজনীতি। সেই থেকে প্রতিটি ধাপে সফলতার সাথে এগিয়ে গেছেন। আজো যাচ্ছেন। সামাজিক কর্মকান্ডেও নিবিড়ভাবে কাজ করেন। শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার সংগঠনসহ ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করছেন নির্বাচনী এলাকাসহ সিলেট মহানগরীতে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে গ্রহণ করেন নতুন নতুন পরিকল্পনা। প্রতিটি ধাপেই তিনি সফল হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। রাজনীতির কারণে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বারবার কারাগারে গেছেন। ওই সময়টায় পাঁচবার কারাগারে গিয়ে দীর্ঘদিন বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে।
সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নানান তথ্য উঠে এসেছে মো. শাহজাহান আলী সম্পর্কে। তিনি সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। এমসি কলেজে অধ্যায়নকালে ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগ দেন ১৯৯২ সালে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে এগিয়ে যেতে থাকেন। ২০০১ সালে ইসলামী ছাত্র শিবির এমসি কলেজ শাখার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০২ সালে ওই শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান মো. শাহজাহান আলী। ২০০৪ সালে সিলেট মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৭ সালে কেন্দ্রি ছাত্র শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। ২০১৫ সালে সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারশেনর সভাপতির দায়িত্ব লাভ করেন। এই দায়িত্ব পালন করেন ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ২০২০ সালে দায়িত্ব লাভ করেন সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর জেনারেল সেক্রেটারির। এই দায়িত্ব আজো পালন করছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে গ্রেফতার হয়ে তিন মাস কারাভোগ করেন। ২০১৪ সালে কারাভোগ করেন ৭ মাস। ২০১৬ সালে হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দি ছিলেন এক মাস। ২০২২ সালে ১৫ দিন। ২০২৪ সালে অর্থাৎ চলতি বছর কারাভোগ করেছেন ১৬ দিন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ওইদিন সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন মো. শাহজাহান আলী। ওইদিনের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শাহজাহান আলী বলেন, ৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে থেকে আঁচ করতে পেরেছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। কারাগারের ভেতর ৫ আগস্ট দুপুরে বিটিভির খবর দেখছিলেন। হঠাৎ করে বিটিভির স্ক্রলে দেতখতে পেলেন শেখ হাসিনা পালিয়েছেন। তাৎক্ষণিক সেজদায় গিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন শাহজাহান আলী।
নির্বাচনী এলাকার সামাজিক কর্মকান্ডে অনেক অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া সিলেট মহানগরীতেও অনেক অবদান রয়েছে-এমন তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের অনেক কর্মী। বিশেষ করে করোনার সময় ও ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন শাহজাহান আলী।
মো. শাহজাহান আলী বলেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পুরো দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। লকডাউন আর সাটডাউনের কারণে মানুষজন ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। কিছুদিন না যেতেই ঘরের খাবার শেষ হয়ে আসে। সেই সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির মানুষের মধ্যে হাহাকার নেমে আসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনা আক্রান্তের খবর আসতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্যে জামায়াতে ইসলামী পরিকল্পনা নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরবন্দি মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া শুরু করি। সেই সাথে স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত লোকজনের জন্যে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে পাঠাতে র্সাক্ষণিক এম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হতো। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ যাতে ভেঙ্গে না পরেন সেজন্যে মনোবল জোগাতে অবিরাম কাজ করতে হয়েছে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফন কাপনে জটিলতা দেখা দেয়। এই জটিলতা দূর করতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারাই মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের দাফন কাপনে আমরা এগিয়ে গিয়েছি।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন করোনার সময় মো. শাহজাহান আলী আতঙ্কিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে সব ধরণের সহযোগিতা দিয়েছেন। কর্মহীন মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী, স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত লোকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। করোনার বিপর্যয় দূর হতে না হতেই ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ওই বন্যার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজস্ব টিম নিয়ে ছুটে গেছেন দুর্গম এলাকায়। ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। বন্যাকবলিত লোকজনকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। সেই সাথে স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে মো. শাহজাহান আলী বলেন করোনার বিপর্যয় যাওয়ার পর ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এই বন্যার সময় আমাদের প্রথম কাজ ছিল আক্রান্ত লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা। সিলেট মহানগরসহ সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় আমাদের একাধিক টিম ওইসব কাজ করেছেন। তিনি বলেন বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেককে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
মো. শাহজাহান আলী বলেন, তিনি জালালাবাদ যুব ফোরামের সভাপতি। এই সংগঠনের ব্যানারেও অনেক কাজ করেছেন। এলাকায় ছুটে গেছেন। অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যে মো. শাহজাহান আলী সাংগঠনিকভাবে মনোনীত। এই খবরে স্থানীয়রা ইতিবাচকভাবে দেখছেন শাহজাহান আলীকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মো. শাহজাহান আলী সাংগঠনিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে এলাকাটি সুন্দর করার বিভিন্ন সময় নানান ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা শতভাগ জনকল্যাণমুখি। এজন্যে এলাকার মানুষ মো. শাহজাহান আলীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। মো. শাহজাহান আলী সিলেটসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছেন। যা ভোটের মাঠে বিশাল প্রভাব ফেলবে। এছাড়া অন্যান্য দলের লোকজন ইতিবাচকভাবে দেখেন শাহজাহান আলীকে।
এ প্রসঙ্গে মো. শাহজাহান আলী বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর বিজয় নিশ্চিত। এর কারণ রয়েছে অনেক। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যখনই দুর্যোগ এসেছে তখনই অসহায় পাশের দাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও তাঁর সামাজিক সংগঠনগুলো। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় তিনি সার্বক্ষণিক কাজ করেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যেও কাজ করেন। শিক্ষা বিস্তারে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এছাড়াও এলাকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্যে পরিকল্পিতভাবে কাজ করেন। এসব কারণ ছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে। যা এলাকার মানুষকে মুগ্ধ করেছে।