১০ বছর আগেও দেশে মোটরসাইকেল ছিল সাড়ে সাত লাখ। ২০২১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখেরও বেশি। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে সড়কে মোটরসাইকেলের চাপ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিও। দুর্ঘটনা ঘটলেও মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের নিরাপত্তার জন্যই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ২০১৮ সালে আইন করেছে সরকার। অথচ চালকরা যেসব হেলমেট ব্যবহার করছেন, তার ৮৯ শতাংশই অনিরাপদ ও পুরোপুরি মানসম্মত নয়। হেলমেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার চেয়ে চালকরা পুলিশি ঝামেলা এড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে শুধুই আইন রক্ষার তাগিদে হেলমেট পরছেন অধিকাংশ চালক। রাইড শেয়ারিংয়েও দেখা যায় একই চিত্র।
আইন করে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও দেশে মানসম্মত ও নিরাপদ হেলমেটের ব্যবহার কম। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় যে দুই শতাধিক পণ্য রয়েছে, তার মধ্যে হেলমেট একটি। ফলে নির্ধারিত মান অনুযায়ী হেলমেটের উৎপাদন ও আমদানি হওয়ার কথা। তিন স্তরবিশিষ্ট হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্নও থাকার কথা। তবে সড়কে চলাচল করা মোটরসাইকেলের অধিকাংশ চালক মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করছেন না। নিম্নমানের হেলমেট আমদানিতে বিএসটিআই নিষেধাজ্ঞা দিলেও দেদারসে তা আমদানি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের বার বার সতর্ক করেছি আমরা। এখন নিম্নমানের হেলমেট আমদানির আর সুযোগ নেই। যেগুলো আগেই আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের জেল-জরিমানাও করছি। নীতিমালা পাস হওয়ার পরও একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তারপরও যদি কেউ মানহীন হেলমেট আমদানি করে, সেটা মেনে নেওয়া হবে না
আমদানিকারকরা বলছেন, ভালো মানের হেলমেটের পাশাপাশি নিম্নমানের হেলমেটও আমদানি করা হয়। কারণ বাজারে নিম্নমানের হেলমেট বেশি বিক্রি হয়। সম্প্রতি বিএসটিআই হেলমেটের মান নিশ্চিতে নীতিমালা করলেও আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। ফলে আমদানি করা অনেক হেলমেট বন্দরে আটকে রেখেছে সংস্থাটি।
বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিম্নমানের হেলমেট আমদানি না করতে আমদানিকারকদের বার বার সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নীতিমালা প্রণয়নের আগে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। বাজারে যতই চাহিদা থাকুক, নিম্নমানের হেলমেট আমদানির সুযোগ নেই।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসটিআইকে হেলমেটের গুণগত মান যাচাইয়ের কাজ আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। শুধু দায় এড়ানোর জন্য দু-একটা অভিযান চালালে হবে না। কঠোর মনিটরিং করলেই বাজারে নিম্নমানের হেলমেট কমে যাবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সচেতন হবে। একটু খরচ বেশি হলেও তিন স্তরবিশিষ্ট হেলমেট কিনতে হবে।