ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে রাজনৈতিক নেতা ও বিপুল সংখ্যক বহিরাগতদের প্রবেশের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এর আগে শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের মূল গেইট বন্ধ করে আন্দোলনে নামেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আবারও ক্যাম্পাসে সক্রিয় হচ্ছে ছাত্র রাজনীতি।
তাদের অভিযোগ, গেল ২৮ মার্চ রাত ২টার দিকে ক্যাম্পাসে বিশেষ শ্রেণির রাজনৈতিক নেতারা প্রবেশ করেন। ওই সময় বিপুল সংখ্যক এমন বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। এরপরই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামেন তারা। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করাসহ ৬ দফা দাবি তুলেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশে শঙ্কিত তারা। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘন। যারা বুয়েটে রাতের আঁধারে প্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২৮ মার্চ মধ্যরাতের ক্যাম্পাসে এমন অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক চর্চা। এমন নীতিমালা বহির্ভূত রাজনৈতিক চর্চায় মধ্যরাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বী।
সে ওই বিশেষ রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পূর্বে ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে তার পদ থেকে অব্যাহতি নেবে বলেও জানায়। কিন্তু পরবর্তীতে এবং বর্তমানে প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক চর্চা চলমান রেখেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগতদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো, গার্ডদের সঙ্গে কথা বলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তাদের গাড়ি বের করানো কিংবা প্রবেশ করানো- এই সব প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল ইমতিয়াজ রাব্বী।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে আমরা বুয়েটের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বীকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বীর সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার চাই।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল- এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আসতে হবে।
৪. উপরোক্ত ১ নম্বর এবং ২ নম্বর দাবি আগামীকাল (শনিবার) সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ডিএসডাব্লু’র পদত্যাগ চাই।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে-বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।