আরো দুই দিন সারাদেশে মৃদু তাপদাহ থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবারের তাপদাহ অনেক তীব্র, অনেক শক্তিশালী।
তীব্র এই তাপদাহ থেকে মুক্তি মিলবে ভারি বর্ষণ হলে। আগামী দুই একদিনে বৃষ্টির তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহজেই মুক্তি মিলছে না এই সমস্যা থেকে।
ওলোটপালট দেশের ঋতু কাল। আষাঢ়ের মেঘের দেখা নেই আকাশে। ভরা বর্ষায় চলছে খরা। বৃষ্টি খরায় বিপর্যস্ত মানুষ। তীব্র রোদে হাঁসফাঁস নগর জীবন।
রোদের প্রখরতায় থমকে যাচ্ছে জীবনযাত্রা। বর্ষার আকাশে শরতের প্রতিচ্ছবি। মাঝে মধ্যে সূর্য মেঘে ঢাকা পড়লেও গরমের তীব্রতা কমে না, আরো বাড়ে। রোদে গেলে গা জ্বলে।
এই বর্ষাকালে সকালে সূর্যের আলো ফুটতেই গরম শুরু হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। সন্ধ্যার পর গুমট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম।
এমন অবস্থায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দিনের বেলা স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি দরকার ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। মানুষের কষ্ট হয়ে উঠেছে অসহনীয়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, প্রতি বছরই তিন চারটি তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়। তবে এবারের জুলাই মাসের তাপপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী আর অনেক সবচেয়ে শক্তিশালী। এর প্রভাব দেশজুড়ে।
এরই মধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি রূপ নিয়েছে তাপদাহ। শুক্রবারে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হালকা বৃষ্টি হলেও আরো দুদিন ভ্যাপসা গরম থাকবে।
আর গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সিলেটে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা গত ৬৬ বছরের মধ্যে জুলাই মাসের উষ্ণতম দিন।
তীব্র গরমে স্থবির হয়ে পড়ছে নগর জীবন। গরম থেকে বাঁচতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষ। প্রখর রোদে ঠিক মত কাজ করা যাচ্ছে না, আয়ও হচ্ছে কম।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুপুর হতেই অলি-গলিতেও লোকজনের চলাফেরা একেবারে কম। অনেকে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান।
তীব্র তাপ থেকে বাঁচতে নোংরা জলেই নেমে পরেছেন অনেকে। ভরা বর্ষা মৌসুমের মধ্যভাগে এসেও চৈত্র-বৈশাখের মতো ভ্যাপসা গরমে নাকাল সারাদেশের মানুষজন।
তীব্র তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রা। অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহে প্রচণ্ড গরমে জনজীবনেও হাঁসফাঁস অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে কোথাও অতিরিক্ত জনসমাগম হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে।
তাপদাহে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির, চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি ও পানি সরবরাহের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে চলমান তাপদাহ।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের ১৭ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। এটি আরো চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বায়ু মন্ডলের নিম্নস্তরে জলীয় বাস্পে পরিপূর্ণ। এছাড়া মৌসুমী অক্ষ বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণে ভারতীয় উপকূলে অবস্থান করছে। তাই আকাশে মেঘ জমছে না।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দুষছেন বিশষজ্ঞরা। বলছেন, সারা পৃথিবীকেই এর ফলভোগ করতে হবে।
তারা বলেন, ভয়াবহ গরমের অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এ ছাড়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ‘এল নিনো’ নামের এক বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবেই আবহাওয়া দ্রুত এমন দুর্যোগপূর্ণ হচ্ছে।
এ বছর মার্চ মাস থেকেই তাপদাহ শুরু হয়। এটি চতুর্থ তাপপ্রবাহ। তবে, জুলাই মাসে এমন শক্তিশালী তাপদাহ এর আগে দেখা যায়নি।