ঢাকা, সোমবার ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩শে পৌষ ১৪৩১

বগুড়ার সোনাতলায় ইউপি ভবন সংস্কারের নামে হরিলুট

বগুড়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৭ অগাস্ট ২০২৩ ০৫:২৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নামে চলছে হরিলুটের মহোৎসব। এর মধ্যে টি/আর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপিসহ উন্নয়নের নানমুখি কার্যক্রম চলমান থাকলেও এসব কাজের অনিয়ম চলছে অসাধু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায়।

এ কারণে সরকারের  কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের গোপন পকেটে। সরকারী বিভিন্ন ভবন মেরামত, রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণের নামে নিজেদের ইচ্ছামত নামমাত্র কাজ দেখিয়ে টাকা লুট করে নেয়া হচ্ছে।

 

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ৩০ পর্বের ১ম পর্বে উঠে এসেছে উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মেরামতের অনিয়মের চিত্র। এই অনিয়মের নেপথ্যে কাজ করছেন সোনাতলা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুল হক। এ কর্মকর্তা কাজের শুরু থেকেই নানা মূখী অনিয়ম দেখেই না দেখার ভান করে চালিয়ে দিয়েছেন। কাজ যখন শেষের পর্যায়ে তখন বিষয়টি নজরে আসে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা পারভিনের নজরে। এমন অনিয়ম দেখে পুনরায় সঠিকভাবে কাজ করার তাগিদ দেয়।

এতে করে উপজেলা প্রকৌশলী নানা ধরনের ফন্দিফিকির করেন। এক পর্যায়ে এই কাজের বিলটি অনুমোদন দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন এবং বলেন, “আমাকে বিশ্বাস করে আর ৩ দিনের সময় দেন। এই সময়ের মধ্যেই সঠিকভাবে কাজ করে দিব।”  তবে, এসব কথায় কান না দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শো-কজ করার সিদ্ধান্ত নেন। 

 

সরেজমিনে পাকুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান একেএম লতিফুল বারী টিম এর কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায় নিম্নমানের টাইলস্, অপরিপক্ক কাঠ দিয়ে দরজা জোড়াতালিসহ দেওয়ালের প্লাষ্টার ও রং করা হয়েছে অতি নিম্ন মানের। এছাড়াও ভবনটির  অন্যান্য দরজা-জানালায় জোড়াতালি হিসেবে যেসব কাঠ দেওয়া হয়েছে তাও অতি নিম্নমানের। আবার ঘুনে পোকা খাওয়ার স্থানগুলোতে কাঠের গুড়ো গোজাঁমিল দেওয়া হয়েছে। যা দেখে সাধারণ মানুষগুলোও নির্বাক। ছাদের উপরে সিসি ঢালাই যে অংশে প্রয়োজন সে অংশে না দিয়ে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে করা হয়েছে। তাও আবার একেবারে নিম্নমানের। পানি সাপ্লাইয়ের পাইপগুলো লাগানোতেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। 

 

এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই কাজে নির্দিষ্ট বাজেটের অর্ধেক টাকারও কাজ করা হয়নি। বাকি টাকা কোথায় যাচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান একেএম লতিফুল বারী টিম বলেন, এত নিম্নমানের কাজ বিগত দিনে আমি দেখিনি। উপজেলা প্রকৌশলীকে বারবার জানালেও তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। ঠিকাদারের সাথে এই কাজ নিয়ে আমার উচ্চ-বাচ্যও হয়েছে। যখন দেখলাম অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হয়নি তখন থেকে আমি চুপ হয়ে আছি। আমি চাই এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

 

উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর মারফত জানা যায়, ইউপি ভবন মেরামতের কাজটি পায় সাবিহা এন্টার প্রাইজ, কিন্তু তিনি কাজটি না করায় সোনাতলার উপজেলার আখি এন্টারপ্রাইজ কাজটি করেন। আখি এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ আল-আমীনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন। আমরা সব ধরনের কাজ করে থাকি উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে। তাদের দিক নির্দেশনা অনুযায়ীই করে থাকি। কাজের বেশিরভাগ সময় কর্মকর্তারা সরেজমিনে উপস্থিত থাকেন এবং দিকনির্দেশনা দেন।

সোনাতলা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুল হকের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী নুরুল আলমের সাথে তিনি বলেন, আমাদের সকল কাজ ইষ্টিমেট অনুযায়ীই হয়ে থাকে তার পরেও ভূলত্রুটি মানুষের হয়। যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে পূণরায় ঠিক করে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন এক বছরের মধ্যে এই কাজের কোন সমস্যা হলে তার মেরামত করে দেয়ার দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।

 

এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা পারভিন বলেন, পাকুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের মেরামত কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং নিম্নমানের কাজের সত্যাতা পাওয়া যায়। এর পর এই কাজ পুনরায় করার জন্য নির্দেশ দেই কিন্তু নানা ধরনের তালবাহানা করতে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে বারবার বললেও সে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তিনি সর্বশেষ আমার কাছে ৩ দিনের সময় চেয়েছেন। কিন্তু তিন সপ্তাতেও কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এসব বিলে আমি স্বাক্ষর করে বিপদে পড়তে চাইনা। আমি চাই স্বচ্ছ কাজ। তিনি আরো বলেন, আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সোকজ করবো এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। 

 

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোরশেদ বলেন, আমি জানতে পেরেছি সোনাতলায় চলমান কিছু কাজে অনিয়ম হচ্ছে। আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়গুলো তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, এই দুর্নীতিবাজ উপজেলা প্রকৌশলী সোনাতলায় যোগদান করার পর থেকেই নানা ধরনের অনিয়ম বাসা বেধেঁছে। বিগত দিনের কাজগুলো বেশ ভালোই হচ্ছিল কিন্তু বর্তমানে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের সকল কাজেই অনিয়ম। এঘটনায় অনেকেই বলেন সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বাধাঁগ্রস্ত করার জন্য এরকম দু-একজন কর্মকর্তাই যথেষ্ট। তারা দাবি করেন অতি দ্রুত এই অসাধু কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দিয়ে একজন দক্ষা ও নিতিবান কর্মকর্তাকে যোগদান করানোর।