অনিয়মের আখরায় পরিনত হয়েছে সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কার্যক্রম। চলছে উন্নয়নের নামে হরিলুট। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মস্তবড় ফিরিস্তি হাতে নিয়ে এসব বরাদ্ব নিজেদের পকেটে ঢুকাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রী।
বরাদ্দে পিছিয়ে না থাকলেও কাজের নামে রয়েছে সর্বোচ্চ ফাঁকি। কোথাও কোথাও কোন কাজ না করেই বিল উত্তোলন, আবার কোথাও নাম মাত্র কাজ করে পকেট ভাড়ি করেছেন তারা।
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ২য় পর্বে উঠে এসেছে, উপজেলার তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের কাচারী বাজার হতে পিএমডি দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত সোলিং করনের কাজ। ২০২১-২২ অর্থ বছরের এই কাজের বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৫৭ লক্ষ ৬৫,৫৬০ টাকা।
এই কাজের বাজেট অনুযায়ী যেভাবে কাজ করার কথা তার শতকরা ১০ ভাগ নিয়ম মেনে কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ও কয়েকটি অঞ্চলের সুবিধাভোগি মানুষের। তারা বলছেন নিম্নমানের ইট দিয়ে মাত্র কিছ ুদিন কাজ করে শেষ করেই চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই রাস্তার করুন পরিনতি। মাত্র ১ বছরেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই রাস্তা। প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা। এক কিলোমিটার এই রাস্তার বিভিন্নস্থানে ধসেগিয়ে ইটগুলো পানিতে পড়ে গেছে।
সেগুলো আবার ইউপি চেয়ারম্যানের নিজস্ব উদ্যোগে জোড়াতালি দিতে শুরু করেছে। এসব করা হচ্ছে মনে বুঝ দেয়ার মত করে। এই রাস্তার কোথাও কোন গাইড ওয়াল নির্মান করা হয়নি। নিয়মের চরম ব্যতয় ঘটিয়ে এই কাজের শেষ করা হয়েছিল।
এই কাজের বাজেট অনুযায়ী ১ নং ইট দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও, করা হয়েছে ২ ও ৩ নম্বর ইট দিয়ে। এছাড়া ইট ভিজিয়ে রাখা, রাস্তার মাটিতে পানি দেয়া, রোলিং করা, পানি ছিটিয়ে দুর্মুস করা, রাস্তার দুই ধারে ঘাস লাগানো, গজারি কাঠের গুড়ি দিয়ে প্যালাসাইডিং করাসহ বিভিন্ন নিয়ম মেনে কাজ করার কথা থাকলেও এসবের কোন নিয়ম না মেনেই কাজ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা বলেন কাজের সময়ে রোলিং করাতো দুরের কথা এই রাস্তায় কোনদিন রোলার মেশিন আসেইনি, দুর্মূস করাতো দুরের কথা ইট দিয়েও কোন সময় মাটিতে আঘাত করা হয়নি বরং কাজের পূর্বে যে অবস্থায় ছিল ঐ অবস্থাতেই কোদাল দিয়ে কোনমতো মাটি সমান করে তার উপরেই নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা বলেন এসব নিম্নমানের কাজ নিয়ে বিভিন্নস্থানে অভিযোগ করে কোন কাজ হয়নি বরং হুমকি-ধামকি ও মানষিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল মন্ডলের সাথে তিনি বলেন, এখানে নিম্নমানের কাজ হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে আমি বারবার বললেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি বরং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানরে স্বত্বাধীকারি অসিম কুমার জৈন নতুন বলেন তার নাকি অনেক লোকসান হয়েছে এই কাজে। আমি এলাকার চেয়ারম্যান হলেও আমাকে বিন্দু পরিমান মূল্যায়ন করা হয়নি।
বিষয়টি জানতে অসিম কুমার জৈন নতুনের সাথে বারবার মুটোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছাঃ আয়েসা সিদ্দীকার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি সোনাতলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কাজ শুরু হলেও বিশেষ কারণে আমাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল সেকারণে এই রাস্তা সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি একা মানুষ হয়ে এতো কিছু দেখতে পারিনা। কাজ কেমন হলো না হলো এসব দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার। তিনি আরো বলেন ডিসি স্যার যেমন সব কাজ দেখতে পারেনা সেরকম আমিও পারিনা। আমাদের চেয়ারের অনেক দায়িত্ব থাকেতো সেকারণে এসব ছোটখাটো কাজ দেখার সুযোগ হয়না। এসময় এই কর্মকর্তা তার দায়িত্ব নিয়ে সরকারের আরো বিভিন্ন সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যেমন মুজিব কেল্লার কাজে আমাকে কোন জায়গাতেই রাখা হয়নি কেনো রাখা হয়নি এটি একটি চিন্তার বিষয়। আপনারা লেখেন যে, আমাকে মুজিব কেল্লার কাজের সাথে কেনো জড়িত করা হলো না। এসব করার কারণে আমিও কষ্ট পাই।
চরাঞ্চলসহ দুটি জেলা ও কয়েকটি অঞ্চলের প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষের সোনাতলা তথা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র পথ এটি। কিন্তু উন্নয়নের তেমন কোন ছোয়া লাগেনি এই অঞ্চলে। নানামূখী দুর্যোগে জর্জড়িত হলেও তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি এই অঞ্চলের মানুষ। আবার সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন তা লুটে-পুটে খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। এসব অনিয়মের মধ্যে রাস্তা-ঘাট, আবাসন প্রকল্প, বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষগুলোকে ত্রাণসহ নানা ধরনের সুবিধাগুলো দেয়ার নামে রয়েছে চরম অনিয়ম ও হরিলুটের অভিযোগ। অর্থাৎ স্বজনপ্রীতি ও আত্বীয়করনেই চলে যায় এসব সুবিধা। আর গরিব ও অসহায় মানুষগুলো এখনো অসহায়ই রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য এই এলাকার বড় মসজিদ এলাকার অদুরেই এই রাস্তার পাশে গত কিছুদিন পূর্বেই ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দের দুই লক্ষ টাকা ব্যয়ে করা হয়েছিল ২০ মিটার গাইড ওয়াল নির্মাণ। তা এখন পানির নিচে অর্থাৎ এই গাইড ওয়াল কোন উপকারে আসেনি। এই গাইড ওয়ালের পাশেই স্থাপন করা হয়েছিল নামফলক কিন্তু তাতে বরাদ্দকৃত অর্থের স্থানে ফাঁকা রাখায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এই কারণে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এসে সেটি তুলে নিয়ে গেছে যা এখনো পর্যন্ত লাগানো হয়নি। মূলত এসব উন্নয়নের ফিরিস্তি দাখিল করা হয় নিজেদের পকেট ভাড়ি করতেই।
স্থানীয়দের দাবি উন্নয়মূখী সরকারের কর্মকান্ডগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অসাধু কর্মকর্তা, স্বার্থপর নেতা ও ছলনাময়ী জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের গোপন পকেটে কোটি কোটি টাকা ঢুকিয়ে একদিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো আবার অন্য দিকে সাধারন মানুষগুলোকে মায়া কান্না দেখিয়ে বারবার প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করতে প্রস্তুত এই জনপ্রতিনিধিরা। আর এসবের সহযোগিতা করতেও মানুষের অভাব নেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে।