ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বন্যায় ক্ষতি ৮৭ হাজার কোটি টাকা: প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৫ জুলাই ২০২২ ০৮:০৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

এবছর সিলেটসহ সারা দেশের ১৮ জেলায় বন্যায় আনুমানিক ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।  

তিনি বলেন, ১৪ জুন শুরু হওয়া বন্যায় ১২ জন মারা গেছেন আর আহত হয়েছেন দুই হাজার ৮৮০ জন; আশ্রিত মানুষের সংখ্যা ৭২ লাখ ৮১ হাজার ২০৪ জন।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ছয় জন।

সোমবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সাম্প্রতিক বন্যা, ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন,‍‍‍‍ এ বছর মে মাসের ২য় সপ্তাহে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে অবিরামভাবে কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরায় কয়েকদিন ধরে অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত হয়। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানিতে ১৩ মে থেকে পূর্বাঞ্চলের সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ ও আশেপাশের জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে এই বন্যা দেশের ১৮টি জেলায় বিস্তৃতি লাভ করে।  

তিনি বলেন, এ বন্যায় সম্পূর্ণ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৪৯ একর জমি আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৭ হাজার ১৫২ একর। ১৮ হাজার ৪৭৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ আর এক লাখ ৬৭ হাজার ১৪৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্রিজ ও কালভার্ট সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২৯টি আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৪৯৬টি। এছাড়া ৬৬৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবারের বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৮৮৬ কিলোমিটার সড়ক। ইট খোয়া দিয়ে নির্মিত ৩১৫ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৭৬ কিলোমিটার সড়ক। এছাড়া কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭২১ কিলোমিটার আর আংশিক হয়েছে ছয় হাজার ৮৫ কিলোমিটার।

এনামুর রহমান বলেন, বন্যায় ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩৪টি মাদ্রাসা, ৩৯টি মসজিদ, সাতটি মন্দির ও একটি গীর্জা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দুই হাজার ৫৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৪৩টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯৫টি কলেজ, ২৪০টি মাদ্রাসা, ৩০টি কমিউনিটি স্কুল, এক হাজার ৯৯৯টি মসজিদ, ৫৮৯টি মন্দির, ১৯টি গীর্জা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১৬৯ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৮৮২ কিলোমিটার বাঁধ।

তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের (সম্পূর্ণ) আনুমানিক আর্থিক মূল্য এক হাজার ২৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার ১১২ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের (আংশিক) আনুমানিক আর্থিক মূল্য ৫৫ হাজার ৯৫৭ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ৫০৮ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি (সম্পূর্ণ) ৩৬৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ০৪৩ টাকা এবং (আংশিক) এক হাজার ৩৫৫ কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ৫৫৫ টাকা। এভাবে ব্রিজ/কালভার্ট পাকা সড়ক, ইট-নির্মিত সড়ক, কাঁচা সড়ক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির এবং বাঁধের সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে আনুমানিক বন্যায় সারা দেশে ক্ষতি ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭২ টাকা।

এনামুর রহমান বলেন, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে বিতরণের লক্ষ্যে গত ১ এপ্রিল থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সাত হাজার ২০ মেট্রিক টন চাল, নয় কোটি ৪৪ লাখ নগদ টাকা, এক লাখ ৪০ হাজার ১৩২ প্যাকেট/বস্তা শুকনো ও অন্যান্য খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৪০ লাখ টাকা, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৪০ লাখ, গৃহ মঞ্জুরী বাবদ দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং আট হাজার ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সে সংখ্যা সম্ভবত ৭২ জনের মতো। তবে অন্যরা বজ্রপাতে, নৌকাডুবি, সাপের কামড়ে মারা গেছেন। শুধু বন্যায় ১২ জন মারা গেছেন, তা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা পুর্নবাসনে সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে। এখন আমাদের আবেদন করতে হবে, তারপর পুর্নবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।