ঢাকা, শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সনাতন পদ্ধতিতে আখ মাড়াই

শাহনেওয়াজ শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:০১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে পুরোনো পদ্ধতিতে মহিষের চোখ বেঁধে ঘানি টেনে আখ মাড়াচ্ছেন চাষিরা।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিশ্বায়নের এই যুগে কত কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি উন্নত হয়েছে মানুষের চিন্তা ধারণা। এক সময় গ্রামের বাড়িতে শীতের পিঠা-পুলি তৈরি করতে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করতেন মা-বোনেরা। ঠিক তেমনি আখ যাঁতাকলে মাড়িয়ে রস বের করে রসালো সুস্বাদু ভিন্ন স্বাদের পিঠাসহ নানা রকম খাদ্য উপকরণ তৈরি করা হতো।

বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন অত্যাধুনিক মেশিনের আবির্ভাব হওয়ায় এসব দৃশ্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে কিছু কিছু গ্রামে এই আধুনিকায়নের ছোঁয়া এখনো লাগেনি। এখনো অনেক গ্রামের আখ চাষিরা পুরনো পদ্ধতিতে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই করে নানা রকম খাদ্য উপকরণ তৈরি করছেন।

ঐতিহ্যবাহী এ রকম দৃশ্য দেখা যায় বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে। সেখানকার আখ চাষিদের কর্মে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি এখনো। তারা সনাতন পদ্ধতিতে আঁকড়ে ধরে আছে বাপ-দাদার সেই পুরনো ঐতিহ্য। তবে এখনো ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছে এ পদ্ধতিতে আখ মাড়াই থেকে সংগৃহীত রস, লালি এবং গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি। 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে অনেকগুলো আখ মাড়াইয়ের তলা। এই গ্রামে ও আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে আখের চাষাবাদ হয়েছে। কোন কোন বাড়ির সামনে আখ মাড়াই কল বসানা আছে। কেউ কেউ আখ কেটে সেগুলোকে মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছেন। আখ মাড়াই করে বের করা রস কড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মুখরোচক লালি গুড়।

আখ মাড়াই কলগুলোতে একটি  মহিষকে কলের একটি অংশে বেঁধে গোলচত্বরের মতো নির্দিষ্ট এলাকা ঘুরতে দেখা যায়।  আখ চাষিরা আখ যাঁতাকলে দিচ্ছেন। কল এর একটি অংশ থেকে রস বের হচ্ছে। সে রস একটি পাত্রে সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আখ চাষিরা বলেন, এই রস পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে লালি এবং লালিকে আরো তাপ দিয়ে গুড় তৈরি করা হবে। এসব আখ চাষে খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। এক মৌসুমে খরচ বাদে তারা মাথাপিছু প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করে থাকেন।

সনাতন কায়দায় হলেও এই পদ্ধতিতে তৈরিকৃত লালি ও গুড়ের কদর মানুষের কাছে আকাশচুম্বী। বিশেষ করে শীতকালে এর চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যায়। প্রতিদিন আখের রস ও লালি নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিড় করেন পর্যটকরা।  

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ