দিনদুপুরে বন্দরের ব্যস্ততম সড়কে ভারতীয় ট্রাক চালকেরা স্থানীয় দোকান থেকে ডিজেল নিয়ে ট্রাকে পাচার করলেও যেন কোন মাথা ব্যথা নেই বন্দর নিরাপত্তাকর্মী বা স্থানীয় প্রশাসনের। তবে পুলিশ বলছে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বন্দরের। আর দায় এড়িয়ে গিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন ট্রাকের তেল ফুরিয়ে গেলে ভারতীয় চালকেরা তাদের ট্রাকে তেল নেয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৮০ টাকা ২৫ পয়সা। আর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডিজেলের লিটার ৯৪ রুপি। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের তেলের মূল্য বেশি লিটারে ৩০ টাকা। বাংলাদেশে ডিজেলের দাম কম হওয়ায় লাভের আশায় সুযোগ পেলে ভারতীয় ট্রাক চালকেরা বেনাপোল বন্দর এলাকার ডিজেল বিক্রেতাদের কাছ থেকে ডিজেল কিনে নিয়ে যায়।
প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৪শ‘ ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে বেনাপোল বন্দরের প্রধান সড়ক এর ছোট আঁচড়ার মোড় ও বাইপাস সড়কের ছোট আঁচড়া মোড় সংলগ্নসহ ৫/৬টি স্থানে এই ডিজেল তেল পাচার করার চক্রটি অবস্থান করে। তারা বন্দর এলাকার বিভিন্ন তেল পাম্প থেকে বড় বড় কন্টিনারে করে তেল এনে ওই সব জায়গায় লুকিয়ে রেখে এবং সুযোগ বুঝে ওই সব ভারতীয় চোরাচালানি ট্রাক চালকদের গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। বন্দর বা প্রশাসনের যথাযথ তদারকি না থাকায় বন্দর এলাকায় প্রকাশ্যে সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে বিভিন্ন মুদি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ডিজেল।
বন্দরের বাইপাস সড়কে কাস্টমসের স্ক্যাানিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় একটি ট্রাকে ১৮ লিটার ডিজেল নিচ্ছে এক ট্রাকচালক। আশপাশে অনেক নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও কারো নজর নেই। এর আগেও কয়েক দফায় বন্দরের ২ নং গেট এলাকা থেকে কন্টিনারে করে এদেশের কিছু অসাধু লোককে ভারতীয় ট্রাকে দিতে দেখা গেছে।
ট্রাক চালকদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ডিজেল পাচার হচ্ছে গত মাসে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদনের পর নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ আসে বন্দরে। এরপর থেকে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা নিরাপত্তা বাড়ায়। এছাড়া তেল পাচার প্রতিরোধে এগিয়ে আসে বিজিবি। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সীমান্তের শূন্য রেখায় বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় ট্রাকের ট্যাঙ্কিতে থাকা তেল পরিমাপ কার্যক্রম চালায়। তবে বন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বন্দর এলাকা থেকে ট্রাক চালকেরা ভারতে ডিজেল পাচারের সুযোগ পাচ্ছে অভিযোগ বাংলাদেশি ট্রাক চালকদের।
তেল নেওয়া ভারতীয় ট্রাকচালক বিশ্বাস তরফদার জানান, ট্রাকে তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই বাংলাদেশ থেকে ১৮ লিটার তেল কিনেছি। কেউ নিষেধ করেনি।
বাংলাদেশি ট্রাক চালকেরা জানান, বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী বা প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। এতে অবাধে ভারতীয় চালকেরা এদেশ থেকে ডিজেল নিয়ে ভারতে যাচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী কামাল হোসেন জানান, এক লিটার ডিজেল ভারতে নিতে পারলে ৩০ টাকা লাভ। সুযোগ পেলে তো নিবে। এক্ষেত্রে বন্দরের নজরদারি বাড়াতে হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভারতীয় চালকের তেলের ট্যাঙ্কিতে হাওয়া ঢুকেছিল তাই বেনাপোল থেকে ১৮ লিটার তেল নিয়েছে চালক নিজে স্বীকার করেছে। কোথা থেকে কিভাবে তেল কিনল বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর থানার ওসি মামুন খান বলেন, বন্দর এলাকা থেকে তেল পাচার রোধে কাজ করার কথা বন্দর কর্তৃপক্ষের। এটি পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।